প্রাণ ভয়ে বাংলাদেশ পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা দেখতে কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) ট্রানজিট সেন্টার পরিদর্শন করেছেন এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্ভেন মিকসের।
ট্রানজিট সেন্টার পরিদর্শনকালে ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তারা মিকসেরকে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিফ করেন। এরপর মন্ত্রী সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও দেখা করেন।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে জরুরি পরিস্থিতিতে এস্তোনিয়া সরকার জাতিসংঘের এই সংস্থাটিকে বিপুল অর্থ সহায়তা দিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর কর্তৃপক্ষ।
সংস্থাটির ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘তাদের সাহায্যের কারণেই আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশাপাশি তাদের আগমনে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের দরিদ্র পরিবারগুলোর জীবনমান পরিবর্তনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এই অর্থায়নের জন্য আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় গত বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত বহু মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনইউচসিআর-এর তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় হাজার খানেকের বেশি রোহিঙ্গা মারা গেছে। যদিও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দাবি, সংখ্যাটি মাত্র ৪শ’।
তবে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্তিয়েরস – এমএসএফ)-এর দাবি, ২৫ আগস্ট সহিংসতা ছড়ানোর পরবর্তী একমাসেই প্রায় ৭ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছিল।
প্রাণভয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর জরিপ চালিয়ে এই আনুমানিক হিসেবের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে একে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নিধন কর্মসূচি’ বলে বর্ণনা করেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।