কক্সবাজারের বালুখালী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের জন্য ১৪ হাজার তাঁবু তৈরি করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) রোববার থেকে এসব তাঁবু তৈরির কাজ শুরু করেছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে তাঁবু নির্মাণ কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনা বাহিনীও এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার দেয়া ত্রাণ সামগ্রী ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে পরিবহন করে কক্সবাজারে জেলা প্রশাসকের দফতরে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বও সেনা বাহিনী পালন করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
রোববার সকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, রোহিঙ্গাদের একটিমাত্র ক্যাম্প বালুখালীতে স্থানান্তর, প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন বিষয় নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে জাতিসংঘের দুই সংস্থা ইউএসএইচসিআর ও আইওএম। এই দু’টি সংস্থা রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব তাঁবু সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, বালুখালীতে স্থাপিত নতুন ক্যাম্পকে ২০টি ব্লকে ভাগ করা হবে। আপাতত বরাদ্দ দুই হাজার একর ভূমিতে তাঁবু তৈরি করে সেখানে রোহিঙ্গাদের থাকার জায়গা করে দেয়া হবে। প্রতিটি তাঁবুতে ৬টি রোহিঙ্গা পরিবারকে থাকার ব্যবস্থা করা হবে। সেখানে সব রোহিঙ্গার স্থান সংকুলান না হলে আরো জমি বরাদ্দ করা হবে। বালুখালীতে ৫ হাজার ২০০ একর জমি রয়েছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ সুষ্ঠু ও গতিশীল করতে ইতোমধ্যে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি’র মাধ্যমে প্রতিদিন ১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গার জন্য খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কাজ জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে।
তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কাজ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য রোববার থেকে ১২টি কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সেখান থেকে ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ হচ্ছে। ১৪ হাজার তাঁবু তৈরির কাজও রোববার থেকে শুরু হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের বালুখালীতে নিয়ে আসা হবে বলে তিনি জানান।
জেলা প্রশাসক জানান, রোহিঙ্গাদের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ বিতরণ কাজ চালিয়ে যাবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। কোন ব্যক্তি, সংগঠন এবং সরকারি বেসরকারি কোন সংস্থা ত্রাণ বিতরণ করতে চাইলে তা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে করতে হবে।
তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার জন্য ইতোমধ্যে ৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ৭০ জন অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কাজ সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পাসপোর্ট অধিদফতর এই কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বালুখালী ক্যাম্পে খোলা হবে রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের একটি শাখা অফিস। এখানে জেলা প্রশাসনের একটি অফিস এবং পুলিশ ক্যাম্প থাকবে।
কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআর মুখপাত্র ভিভিয়ান তান জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণের জন্য তাঁবু, সোলার লাইট, কম্বল, রান্নাঘরের সরঞ্জাম, প্লাস্টিক সীটসহ বেশ কিছু ত্রাণ সামগ্রী শুক্রবার ইউএনএইচসিআর কক্সবাজার কার্যালয়ে এসে পৌঁছেছে। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তা বিতরণ কাজ আজ থেকে শুরু করা হয়েছে।
এছাড়া উখিয়া ও টেকনাফে ৬টি কেন্দ্রে রোহিঙ্গা নিবন্ধন অব্যাহত রয়েছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে নিবন্ধন করছে। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গারাও সেখানে নিবন্ধনের জন্য আসছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।