উপস্থাপনায় এ সময়ের অন্যতম পরিচিত মুখ মৌসুমী মৌ। সারাবছরের মতো ঈদেও একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলে তার কোনো না কোনো অনুষ্ঠান দৈনিক প্রচার হচ্ছে। এর মধ্যে ‘ঘুড্ডি’ খ্যাত নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকীর পরিচালনায় ‘অগ্নিফসল’ টেলিছবিতে কাজ করলেন মৌ। সেখানে আরও অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন, ইয়াশ রোহান, ফারহানা মিঠু, তৌফিকুল ইসলাম ইমন, পৌশাল প্রমুখ। কাজটি নিয়ে উচ্ছ্বসিত মৌসুমী মৌ কথা বললেন চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে-
সালাহউদ্দীন জাকীর মতো বিখ্যাত নির্মাতার নির্দেশনায় ‘অগ্নিফসল’-এ কাজের সুযোগ কীভাবে পেলেন?
স্যার (সালাহউদ্দীন জাকী) একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সিইও ছিলেন। ওই টেলিভিশনে আমি উপস্থাপনা করি। সেখান থেকেই স্যারের সঙ্গে আমার পরিচয়। একটি চলচ্চিত্রে কাজের ব্যাপারে স্যার আমার সঙ্গে কথা বলেন। চিত্রনাট্যও দিয়েছিলেন। ওই কাজটি শুরুর আগে এ বছরের শুরুতে স্যার জানালেন, একটি টেলিছবি বানাবেন। ফরিদুর রেজা সাগর স্যার তাকে টেলিছবি নির্মাণের জন্য বলেছেন ২৬ মার্চে প্রচারের জন্য। তখন শিল্পীদের ডেট মিলছিল না। এরপর মার্চের ৪-৬ তারিখ শুটিং করি। সেসময় করোনার কারণে আর ডাবিং করা যায়নি। টেলিছবিটি এবার ঈদের চতুর্থ দিন (মঙ্গলবার) বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে চ্যানেল আইতে প্রচার হবে।
‘অগ্নিফসল’-এ কাজের অভিজ্ঞতা বলুন…
সালাহউদ্দীন জাকী স্যার একজনই। তার মতো মানুষের নির্দেশনায় কাজ করতে পারা সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার। যারা তার সঙ্গে কাজের সান্নিধ্য পেয়েছেন তারাই অনুভব করতে পারেন। আরও একজন গুণী অভিনেতা ও নির্মাতা আফজাল হোসেন স্যার আমার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আমার থিয়েটার ও মূকাভিনয় ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলেও এ দুজন গুণী মানুষের সঙ্গে আগে কাজ করিনি। তাই শুটিংয়ে খুব নার্ভাস ছিলাম। তবে জাকী স্যার সবসময় বলতেন, আমাকে দিয়েই হবে! আমার মধ্যে উনি ভিন্ন কিছু দেখেছেন। আবার আফজাল স্যার আমাকে শুটিংয়ে দেখে মনে করেছিলেন, আমি কলকাতার মেয়ে! শুটিংয়ে বহুবার তিনি এ কথা বলেছেন। সে এক মজার কাণ্ড! পুরো শুটিংয়ে এ দুজন মানুষের থেকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট পেয়েছি। চারবছর পর জাকী স্যার আবার নির্মাণে ফিরলেন। এতো চমৎকার টেলিছবির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে সুযোগ দেয়ার জন্য জাকী স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের শেষ নেই।
সালাহউদ্দীন জাকী ও আফজাল হোসেনের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে হাতেনাতে যে শিক্ষা পেয়েছেন?
জাকী স্যারের চিত্রনাট্যের ভাষা ও শব্দগুলো বেশ কঠিন ছিল। আমাকে পাঁচ লাইনের একটা সংলাপ একবারে বলতে বলা হলো। আফজাল স্যার শোনার পর আমাকে বললেন, তুমি লেটার মার্কস পেয়েছো কিন্তু তোমার সংলাপ ডেলিভারি দেয়ার ধরন পরিবর্তন করতে হবে। তারপর স্যার দেখিয়ে দিলেন। আমি নাকি দ্রুত কথা বলি! এটাও নোটিশ করে ধীরে কথা বলতে বলেছেন। যে ভবনে শুটিং করেছি সেটা ছিল ৬ তলা। উপর নিচে ওঠা-নামা করতে হচ্ছিল। শুটিং করতে গিয়ে টায়ার্ড হয়ে যাচ্ছিলাম। স্যার এসব ক্ষেত্রে আমাকে খুবই সাহায্য করেছেন। আমাদের বাবা-মেয়ের চরিত্রে আমার মধ্যে কিছু জড়তা ছিল। তাও আফজাল স্যার ইজি হয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন। পুরো তিনদিনেই তারা দুজন আমাকে হাতে ধরে অভিনয় শিখিয়েছেন। কাজটি করতে গিয়ে জাকী স্যারের মেয়ের মতো হয়ে গেছি। প্রতিদিনই তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ হচ্ছে। স্যার আমাকে শিখিয়েছেন জীবনের আলাদা মিনিং। এ শিক্ষাগুলো আমার আগামীতে খুব কাজে আসবে।
আপনার চরিত্রটি সম্পর্কে জানতে চাই?
আমার চরিত্রের নাম মরিয়ম। মরিয়মের বাবা হচ্ছেন আফজাল হোসেন। গল্পটা ১৯৭১-এর মে-জুন মাসের। একটি অবরুদ্ধ বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েকজন মানুষ। একজন হিন্দু, একজন বৌদ্ধ এবং একটি মুসলিম পরিবার। এখান থেকেই জন্ম নেবে ‘অগ্নিফসল’। বাকিটা দর্শকদের দেখার আমন্ত্রণ জানাই।
উপস্থাপনা-অভিনয় দুটো তুলনা করলে কোন কাজটি কঠিন?
উপস্থাপনার চেয়ে অভিনয় আমার কাছে ভয়ংকর কঠিন। বিশেষ করে রোমান্টিক দৃশ্যে অভিনয় করা মারাত্মক কঠিন। উপস্থাপনা আমি দীর্ঘদিন যাবত করছি। তাই উপস্থাপনা আমার কাছে খুব সহজ একটি কাজ। উপস্থাপনা করতে ভীষণ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
এখন থেকে নিয়মিত অভিনয় চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আছে?
অভিনয়ের জন্য নিয়মিতই প্রস্তাব পাই। গতবছর বাংলাদেশের একজন শীর্ষ নায়কের কাছ থেকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলাম। যার কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়াটা অনেক অভিনেত্রীর জন্যেই স্বপ্নের মতো! কিন্তু আমি নিজে তখন তার মতো একজন বড় নায়কের সঙ্গে অভিনয় করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। বিশেষ করে বাণিজ্যিক ছবিতে কাজ করার জন্য এখনও নিজেকে তৈরি মনে করছি না। তাই তখন কাজটি করা হয়নি। কিন্তু জাকী স্যারের চিত্রনাট্য পেয়ে মনে হয়েছে, ইয়েস এই কাজটাই আমার জন্য। আগামীতেও যদি নির্মাতা, সহশিল্পী, চিত্রনাট্য সবকিছুই আমার মনের সঙ্গে মিলে যায় তাহলে অভিনয় করবো।
আপনার থিয়েটার ও মূকাভিনয় প্রসঙ্গে জানতে চাই…
প্রাচ্যনাট থিয়েটারে ২৯তম ব্যাচে স্কুলিংয়ের পর বছর খানেক ছিলাম। ২০১৪ থেকে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন’ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছি। ২০১৬ সালে দিল্লীতে মূকাভিনয় নিয়ে শো করতে গিয়েছিলাম। চীনে মূকাভিনয় করেছি, কলকাতাতে একাধিকবার শো করেছি। আমার সলো পারফর্মেন্স ছিল ‘হ্যাশ ট্যাগ মিটু’।
ঈদে কোন কোন অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছেন?
বিটিভি, এনটিভি, এশিয়ান টিভি, জিটিভি এবং প্রথম আলোর লাক্স ক্যাফে লাইভ সবমিলিয়ে মোট নয়টি অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় আছি।