টি-টুয়েন্টির মারকাটারি বিনোদন, অথচ মিরপুরমুখী হচ্ছে না ক্রিকেট উন্মাদনার দেশের সমর্থকরা। দর্শক টানতে ম্যাচের সময় পিছিয়ে দেয়া হয়েছে একঘণ্টা। কার্যকর হবে শনিবার থেকে। তার আগেই শুক্রবার চেনারূপে দেখা মিলল শের-ই-বাংলার গ্যালারি। মাঠে তারকায় ঠাসা দুই হেভিওয়েট দল, গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ। ম্যাচও জমল বেশ। দর্শনীয় ক্যাচ, হ্যাটট্রিক, দুটি ঝড়ো ফিফটি; ক্রিকেট বিনোদনের রসদে ভরপুর লড়াই।
রোমাঞ্চের পারদচড়া এমন ম্যাচে মাশরাফীদের ২ রানে হারিয়েছেন সাকিবরা।
এই জয়ে ৩ ম্যাচে সবকটি জিতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে ঢাকা ডায়নামাইটস। আর রংপুর রাইডার্স ৪ ম্যাচে ২টি করে হার-জিতে টেবিলের দুইয়ে।
শুক্রবার দিনের প্রথম ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে এসে নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেটে ১৮৩ রানের সংগ্রহ গড়ে সাকিবের ঢাকা ডায়নামাইটস। জবাব দিতে নেমে নির্ধারিত ওভার শেষে এক উইকেট হাতে রেখেও জয়ে নোঙর ফেলা থেকে ২ রান দূরে আটকায় মাশরাফীর রংপুর রাইডার্স।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ঝড় তোলার আভাস দিয়েই সাজঘরে ফেরেন ক্রিস গেইল। ফেরার আগে করে যান এক ছয়ে ৮ রান। তার আউটে দেখা মেলে দর্শনীয় এক ক্যাচের।
আগের বলেই রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেছেন এলবিডব্লিউয়ে আউট হওয়া থেকে। শুভাগত হোমের পরের বলটা ফুল লেংথে পেয়ে বোলারের মাথার উপর দিয়ে সজোরে হাঁকান। আরেকটি ছক্কার অভিবাদনের জন্য হাত উঁচু করতেই দর্শকরা দেখলেন ঢাকার ফিল্ডাররা উল্লাস করতে শুরু করে দিয়েছেন। হাসি গেইলের মুখেও!
হাসি থাকবেই না কেনো, ওরকম অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ! ইদানিং অবশ্য মাঝেমধ্যেই দেখা মেলে এমন ক্যাচের। ক্যাচের নামের খাতায় যদিও পোলার্ডের নামাঙ্কিত, কিন্তু পরিসংখ্যান-স্কোরবোর্ড তো মাঝে মধ্যেই আস্ত গাধা! বোঝাতে পারে না আসল দৃশ্যপটটা।
লংঅফ অঞ্চল থেকে দৌড়ে এসে বাজপাখির মতো উড়ে ক্যাচটি নিয়েছিলেন আন্দ্রে রাসেল। কিন্তু পরক্ষণেই দেখলেন সীমানা পেরিয়ে নিজেসহ ছয় হয়ে যাচ্ছেন। মাটিতে পা পড়তে পড়তে সেটি ছুঁড়ে দেন সীমানার ভেতরে। আর লুফে নেন পোলার্ড।
গেইল হাসিমুখেই মাঠ ছেড়েছেন দুই স্বদেশির এমন যুগলবন্দী দেখে। কিন্তু রংপুরের হাসিটা তখন ক্ষীণ হয়ে আসতে থাকে আরেক ওপেনার মেহেদী মারুফও (১০) দ্রুত সাজঘরের পথ ধরলে।
সেই ক্ষীণ হাসি চওড়া করেন রাইলি রুশো। মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে ৭২ বলে ১২১ রানের জুটি গড়েন। ম্যাচটা যখন সহজ হয়ে যাচ্ছিল, তখনই পথহারান রুশো। বেরিয়ে মারতে যেয়ে স্টাম্পড হন। ফেরার আগে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ৪৪ বলের ঝড়ে ৮৩ করে যান আগের ম্যাচেও ফিফটি করা এ সাউথ আফ্রিকান।
রবি বোপারা (৩) তাকে দ্রুত অনুসরণ করলেও মিঠুন কম যাচ্ছিলেন না। এক চার ও ২ ছক্কায় ৩৫ বলে ৪৯ রানে তিনি সাকিবকে উইকেট দিতেই কক্ষচ্যুত হয় রংপুর। এদিন প্রয়োজনের মুহূর্তে রানের খাতা খুলতে পারেননি মাশরাফী।
এরপরও ম্যাচে ছিল রংপুর। ম্যাচের শুরুর দিকে সহজ দুই ক্যাচ মিস করা এলিস আল ইসলাম শেষভাগে এসে হ্যাটট্রিক করে ম্যাচ টেনে নেন ঢাকার দিকে। ১৮তম ওভারের চতুর্থ বলে মিঠুনকে বোল্ড, পঞ্চম বলে মাশরাফীকে বোল্ড আর শেষ বলে ফরহাদ রেজাকে স্লিপে সাকিবের ক্যাচ বানিয়ে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন অভিষিক্ত এ অফব্রেক বোলার।
অভিষিক্ত হয়েই সোজা পাদপ্রদীপের আলোয়। টি-টুয়েন্টিতে অভিষেকে আগে কেউ হ্যাটট্রিক পাননি। এমন কীর্তির দিনে এলিস ৪ ওভারে ২৬ রান খরচায় ৪ উইকেটে কোটা পূর্ণ করেছেন এলিস।
সেই ধাক্কাতেই ম্যাচটা আর নিজেদের করে নিতে পারেনি রংপুর। হারটাও অবশ্য খুব বড় নয়, মাত্র ২ রানের। সেজন্যই আবার আফসোসটাও বেশি থাকবে রাইডার্সদের!
এর আগে দুপুরে ইনিংসের প্রথম ভাগটা ভালোই বোলিং ছিল রংপুরের। কম খরুচে বোলিংয়ের পাশাপাশি উইকেট নিয়ে ঢাকাকে চাপে রাখেন মাশরাফী-গাজীরা। কিন্তু পরের ভাগে পোলার্ড-রাসেলরা হাত খুললে ১৮৪ রানের বড় লক্ষ্যের সামনেই পড়তে হল রাইডার্সদের।
অধিনায়ক মাশরাফী শুরুতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই মারকুটে হযরতউল্লাহ জাজাইকে (১) সাজঘরে পাঠিয়ে তাকে স্বস্তি নেন সোহাগ গাজী।
অন্যপ্রান্তে মাশরাফীও কম যান না। ৪ ওভারে মাত্র ২২ রান খরচের দিনে যে একটি উইকেট তুলে নিয়েছেন, সেটি প্রতিপক্ষের আরেক ওপেনার সুনিল নারিনের। আইপিএল-সূত্রে ওপেনার বনে যাওয়া এ ক্যারিবীয়ান করতে পেরেছেন মাত্র ৮ রান।
খানিক পর ২ চার ও এক ছয়ে ৮ বলে ১৮ করা রনি তালুকদারকেও সাজঘরে পাঠান সোহাগ গাজী। ধারাবাহিকতায় ১২ বলে ১৫ করা মিজানুর রহমানকে এলবি করে পরিস্থিতি আরও পক্ষে আনেন হওয়েল।
এরপরই দৃশ্যপটের পরিবর্তন। একপাশে সাকিব দেখেশুনে, অন্যপাশে পোলার্ড উড়িয়ে-জুড়িয়ে মন খেলতে থাকেন। দুজনে ৪৫ বলে ৭৮ রান যোগ করেন। কাইরেন পোলার্ডের বিদায়ে ভাঙে জুটি। ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ঝড় তুলে ২৬ বলে ৬২ করে যান এই ক্যারিবিয়ান।
সাকিব ফেরেন তার খানিক পরই। ৪ চারে ৩৭ বলে ৩৬ রানে।
তাতেও বিপদ কাটেনি রংপুরের। আরেক মারকুটে আন্দ্রে রাসেল তখনও ক্রিজে। রাসেলই লক্ষ্যটা টেনে পৌনে দুইশ পার করেন। শফিউলের বলে বোল্ড হওয়ার আগে চারহীন ইনিংসে ৩ ছয়ে ১৩ বলে ২৩ করে যান।
রাইডার্সদের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন বেনি হাওয়েল ও সোহাগ গাজী। একটি করে উইকেট গেছে মাশরাফী, ফরহাদ রেজার দখলে। শফিউল ইসলাম নিয়েছেন ৩ উইকেট।