কখনও হাতের ভাঙা মোবাইল, কখনওবা রঙচটা ঘড়ির ব্যাপারে সাদিও মানের কাছে জানতে চাইতেন সাংবাদিকরা। সেনেগালের রাস্তা থেকে উঠে ইউরোপে রাজত্ব করা মানেও দিতেন বিনয়ী উত্তর। জানাতেন, ওসবে কৃতিত্ব নেই। দরিদ্র মানুষদের সহায়তায় খুঁজতেন সুখ।
বর্তমান আফ্রিকার নেশন্স কাপের চ্যাম্পিয়ন সাদিও মানে যে অন্তর্মুখী, নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চান— সেটা প্রায় সবার জানা। তবে সম্প্রতি একটি ফরাসি দৈনিককে জানিয়েছেন নিজের জীবন এবং ক্যারিয়ারের বিভিন্ন দিক নিয়ে। বলেছেন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো-নেইমারের লাইফস্টাইল তার চাই না, সে অল্পতেই খুশি।
খোলামেলা আলোচনায় বিশ্বের অন্যতম সেরা অ্যাটাকারের কাছে জানতে চাওয়া হয় রোনালদো কিংবা নেইমারের মতন জীবন চান কিনা। বা যতটা বিত্তবান তাতে সেভাবে চলবেন কিনা। প্রশ্ন শুনেই মুচকি হাসেন ইংলিশ ক্লাব লিভারপুলের তারকা ফরোয়ার্ড।
সাদিও মানে বলেন, ‘না! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের অনুসরণ করি, এটাই আমার জন্য যথেষ্ট। আমি তাদের দুর্দান্ত জীবন ভালোবাসি কিন্তু ওই জীবন আমার জন্য তৈরি নয়।’
সাউথাম্পটন থেকে ২০১৬ সালের গ্রীষ্মে রেকর্ড ৩৪ মিলিয়ন ইউরোতে অল রেডদের ডেরায় আসেন সাদিও মানে। সেনেগালের বাম্বলি নামক শহর থেকে উঠে এসে দাপট দেখান ইংল্যান্ডে। লিভারপুলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অন্যতম হিসেবে, ফুটবলে হয়েছেন অন্যতম সেরা আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে। আয় করছেন কাড়ি কাড়ি অর্থ।
তবে অন্য ফুটবলারদের থেকে অনেক ব্যতিক্রম ২৯ বর্ষী এই সেনেগালিজ। বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি বা হাতের মোবাইলটার ক্ষেত্রেও নেই কোনো অভিযোগ। অন্যান্য আফ্রিকান ফুটবলারদের মতো মানেও আফ্রিকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রচুর সাহায্য করছেন। তার বাবা যে মসজিদের ইমাম ছিল, সে মসজিদের সংস্কারের জন্য অর্থ দিয়েছেন। নিজের গ্রামের দরিদ্র মানুষদের সহায়তা করছেন। শৈশবের গ্রাম বাম্বালিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন স্কুল ও হাসপাতাল। দান করছেন লাখ লাখ ইউরো।
ফরাসি পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নিজের এমন উদারতার ব্যাপারে বলেছেন। জানিয়েছেন, আফকন কাপ হয়ে ক্লাব সতীর্থ মোহাম্মদ সালাহ হয়ে কাইলিয়ান এমবাপের লিভারপুলে আসার ব্যাপারেও। বর্তমান ফুটবলের অন্যতম সেরা অ্যাটাকার সাদিও মানে নিজের জয়ও দেখছেন।
মানে বলেন, ‘সমালোচক হয়ে উচ্চবাচ্য করার চেয়ে নিজেকে মাঝে মাঝে দূরে রাখতে পছন্দ করি। কিন্তু প্রধান বিষয়টি অপরিবর্তিত থাকে। আমি মনে করি এটা পরিবর্তন হবে না। ক্যাসমান্সের ছোট্ট শহর থেকে উঠে আসা একটি বালকের এসব কিছু প্রতিহত করাও একধরণের বড় বিজয়।’