চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অনেকদিন ধরেই গোল পাচ্ছিলেন না ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। হয়ত একটু হতাশ ছিলেন! বুধবার রাতে সিআরসেভেন সেটাকে মনের ক্ষোভের আগুনে পরিণত করলেন; আর তাতে পুড়ল বায়ার্ন মিউনিখ। শুরুতে পিছিয়ে পড়েও রোনালদোর জোড়া গোলেই বায়ার্নকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে ফিরেছে জিনেদিন জিদানের দল।
বায়ার্নের মাঠ অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় শুরুতে বেশ গোছানো ফুটবল খেলেছে দুদলই। বড় কোন আক্রমণ শাণাতে না পারলেও চেষ্টা ছিল। ম্যাচের ১৮ মিনিটে প্রথম সুযোগটা পেয়েছিল অতিথিরাই। টনি ক্রুসের বাড়ানো বল করিম বেনজেমার হেড হয়ে ক্রসবার দুর্ভাগ্যে পড়ে। অবশ্য ম্যানুয়েল নয়্যার সুপারম্যানের গতিতে পৌঁছে বলে আঙুল ছুঁইয়ে বায়ার্নের জাল অক্ষত রাখতে ভূমিকা রেখেছেন সেসময়।
পরে ম্যাচের ২৫ মিনিটে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। বায়ার্নের চিলিয়ান মিডফিল্ডার আর্তুরো ভিদালের গোলে। থিয়াগো আলকানতারার কর্নার থেকে পাওয়া বলে জোর গতিতে হেড করেন ভিদাল, তাতে হাত ছুঁয়েও ঠেকাতে পারেননি গোলরক্ষক কেইলর নাভাস।
পরে এই ভিদালই আবার প্রথমার্ধে দুবার হতাশার সাগরে ভাসিয়েছেন স্বাগতিক সমর্থকদের। ৪১ মিনিটে আরিয়ান রোবেনের দারুণ এক ক্রসে মাথা ছুঁয়ে বারের বাইরে পাঠিয়েছেন। ৪৫ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েও তা জোর শটে বারের অনেক ওপর দিয়ে মাঠের বাইরে আছড়ে ফেলেছেন। এসময় ফ্রাঙ্ক রিবেরির শট দানি কারবাহালের বুকে লাগলেও হ্যান্ডবল ভেবে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি।
এই দুইয়ে মাঝে একবার বায়ার্নের ত্রাতা হয়ে ওঠেন নয়্যার। রামোসের বাড়ানো বলে বক্সের বাইরে থেকে রোনালদোর বুলেট শটে অনেকটা ঝাঁপিয়ে পড়ে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান এই জার্মান গোলরক্ষক।
মধ্যবিরতি থেকে ফিরেই সমতায় ফেরার প্রথম সুযোগটি কাজে লাগান রোনালদো। ৪৭ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে সার্জিও রামোসের বাড়ানো বলে কারভাহালের ক্রসে ডান পায়ের শটে বায়ার্নের জাল খুঁজে নেন সিআরসেভেন।
দ্বিতীয়ার্ধে আরেকটি গোলের সহজ সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে অতিথিদের। ৫৬ মিনিটে গ্যারেথ বেলের মাথা ছুঁয়ে আসা বল দারুণ দক্ষতায় কর্নারের বিনিময়ে বাঁচিয়েছেন বাভারিয়ান গোলরক্ষক নয়্যার।
ম্যাচের ৬১ মিনিটে রোনালদোকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার জাভিয়ের মার্টিনেস। দশ জনের দলের বিপক্ষে রিয়ালের আক্রমণ আরো জোরালো হয় এরপর।
এই অর্ধে রিয়ালের আক্রমণ সামলাতেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছে বায়ার্নকে। বারবার স্বাগতিকদের রক্ষণে হামলে পড়েছেন অতিথি খেলোয়াড়রা। ৭২ এবং ৭৪ মিনিটে বেনজামা ও রোনালদোর জোরালো শট নয়্যার ফিরিয়ে না দিলে ব্যবধান এক হালি পূর্ণ করতে পারতো লস ব্লাঙ্কোসরা!
কিন্তু ৭৭ মিনিটে রোনালদোকে আর ঠেকিয়ে রাখতে পারেননি নয়্যার। বেলের পরিবর্তে মাঠে নামা মার্কো আসেনসিয়োর পাসে বস পেয়ে আলতো খোঁচায় ম্যাচে নিজের এবং দলের জোড়া গোল পূর্ণ করেন রোনালদো। এটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তার ৯৭তম গোল।
মাচের ৯০ মিনিটে রামোসের গোল অফসাইডে বাতিল না হলে ব্যবধান আরো বাড়িয়ে নিয়েই মাঠ ছাড়তে পারতো শেষ চারের পথে অনেকটা এগিয়ে যাওয়া রিয়াল। বায়ার্নের জন্য এখন পরিস্থিতি কঠিন। দুটি অ্যাওয়ে গোল হজম করা হয়ে গেছে বাভারিয়ান দলটির। পরের লেগ আবার রিয়ালেরই মাঠে, ১৮ এপ্রিল। সেখান থেকে জয় নিয়ে ফিরতে হলে সাধ্যের সবটুকুই ঢেলে দিতে হবে আনচেলত্তি শিষ্যদের।
রাতের অন্য ম্যাচে রিয়ালের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ পেনাল্টি সুবিধাতেই জিতেছে। ম্যাচের ২৮ মিনিটে বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে দলকে এগিয়ে দেন অ্যান্টনে গ্রিজমান। তাতেই নিজেদের মাঠে লেস্টার সিটির সঙ্গে ১-০ ব্যবধানে জিতে মাঠ ছেড়েছে অ্যাটলেটিকো।