দেশে বড় ধরণের রেল দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করলো দেশবাসী। রোববার রাতে কুলাউড়ায় ব্রিজ ভেঙে সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেসের ১টি বগি খালে পড়ে এবং আরও কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে ৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে বরমচাল স্টেশন থেকে ২০০ মিটার দূরে ইসলামাবাদ এলাকায় পৌছলে পেছন দিকের বগিতে বিকট শব্দ হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সামনে বড়ছড়া ব্রীজ ভেঙ্গে নীচে ১টি বগি পড়ে যায়। আরো ৩টি বগি ব্রীজের পাশে উল্টে দুমড়েমুচড়ে পড়ে। অন্য আরো দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক বেশ কিছুদিন হলো বন্ধ থাকায় রেলপথে অতিরিক্ত চাপ ছিল বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী।
ঘটনার পরপরই যথারীতি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক করতে কাজও শুরু হয়েছে। দ্রুতই হয়তো রেল চলাচল স্বাভাবিক হবে। কী কারণে এই ধরণের দুর্ঘটনা ঘটলো তা নিয়েও সংবাদ প্রকাশ ও সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা চলছে।
যুগ যুগ ধরে অজ্ঞাত কারণে দেশে একটি ব্যবস্থা প্রচলিত, কোনো দুর্ঘটনা বা বড় কিছু না ঘটলে আমাদের অবহেলিত খাত ও সমস্যাগুলো চেনা যায় না। কুলাউড়ায় রেল দুর্ঘটনার পরে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ভেঙে পড়া সেই রেল-সেতুর যেসব ছবি প্রকাশ পেয়েছে, তা রীতিমতো ভয়াবহ! ভাঙাচোড়া স্লিপার, স্লিপারে কোনো নাটবল্টু-পেরেক নেই, এতো বছর ওই সেতু কীভাবে টিকে ছিল তা নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা করছেন অনেকে।
সড়ক ও নৌপথের তুলনায় রেলপথ অনেক কম দুর্ঘটনা প্রবণ ও ট্র্যাফিক জ্যামের প্রকোপ কম বলে রেল জনগণের কাছে বেশ প্রিয়। তারপরেও ২০১৮ সালে রেলপথে ৩৭০টি দুর্ঘটনায় ৩৯৪ জন নিহত ও ২৪৮ জন আহত হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা তৎকালীন রেল অবকাঠামোর ধারাবাহিকতায় আজকের রেল অবকাঠামোর রয়েছে ২৮৭৭.১০ কিমি রুট, যা দিন দিন বাড়ছে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে। গত অর্থবছরে রেলখাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। রেলওয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে এ অর্থ ব্যয় হয়েছে। ২০১৯-২০ এর প্রস্তাবিত বাজেটে ১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে মোট ১২ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। রেলকে জনপ্রিয় ও জনবান্ধব করতে এই টাকায় নতুন নতুন বগি-ইঞ্জিন কেনাসহ নানা ব্যয় খাত অপেক্ষা করছে।
কুলাউড়ায় যে সেতুতে রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে, ওইরকম সেতু দেশে আরও আছে বলে আমাদের ধারণা। নতুন নতুন প্রকল্পে খরচের পাশাপাশি রেলওয়ের পুরাতন অবকাঠামোগুলোর সংস্কার জরুরি বলে আমরা মনে করি। তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে আরো জনপ্রিয় হবে রেল এবং দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা কমে আসবে।