বিদেশের শ্রমবাজার থেকে শ্রমিকদের জোরপূর্বক দেশে পাঠিয়ে দেয়ার খবর যখন অশনি সংকেত, তখন একটি আশার খবর আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। চ্যানেল আই অনলাইনের প্রতিবেদনে জানা গেছে, ‘বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যের বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছে ৭৭১ কোটি ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। ওই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৬২৯ কোটি ডলার।
এছাড়া একক মাস হিসাবেও গত নভেম্বরের চেয়ে এ বছর নভেম্বরে রেমিট্যান্স বেড়েছে। সদ্য শেষ হওয়া নভেম্বরে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার, যা গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ৩১ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। ওই সময় রেমিট্যান্স এসেছিল ১১৮ কোটি ডলার।
রেমিট্যান্স প্রবাহের এই ধারা ইতিবাচক। প্রবাসী শ্রমিকদের টাকা পাঠানোর হার বাড়ার তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এর মধ্যে রয়েছে: দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয়া, টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়া এবং প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে- এই ভয়ে জমা না রেখে টাকা পাঠিয়ে দেয়া।
বৈধ পথে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির হার ধরে রাখতে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হবেন বলেই আমাদের আশাবাদ। এজন্য রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দেয়ার পাশাপাশি বিদেশ থেকে শ্রমিকদের যেন অন্যায়ভাবে দেশে পাঠানো না হয় সেই বিষয়েও সরকারকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশের সিংহভাগ শ্রমিক বিদেশে খুবই ছোটধরণের কাজ করেন। এতে বেশি টাকা পাওয়া যায় না। তাই দক্ষ ও শিক্ষিত শ্রমিক পাঠাতে হবে। এছাড়া নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের উপর নির্ভর না করে এশিয়ার কেন্দ্রীয় দেশগুলো ও পশ্চিম ইউরোপের যেমন, আজারবাইজান, আরমেনিয়া, উজবেকিস্তানে এ ধরনের দেশে শ্রমিক পাঠানোর কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা। আমরা তাদের এসব পরামর্শের সঙ্গে একমত পোষণ করছি।
এছাড়া শ্রমিকদের জোরপূর্বক পাঠিয়ে দেয়া দেশগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করার পাশাপাশি বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে জটিলতা এবং এজেন্সি ও দালালদের প্রতারণাসহ অতি মুনাফা বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এসব বিষয়গুলো নজরদারির আওতায় আনলে রেমিট্যান্স বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে বলেই আমরা মনে করি। এজন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।