হুন্ডি রোধে পদক্ষেপ এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে রেমিটেন্স প্রবাহ। গত দুই বছরের পড়তিভাব কাটিয়ে এখন প্রবৃদ্ধির ধারায় চলছে প্রবাসীদের পাঠানো এই অর্থের চাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে রেমিটেন্স এসেছিল ১১৪ কোটি ৯০ ডলার। আর মার্চে এসেছে ১৩০ কোটি ৪ লাখ ডলার। সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে রেমিটেন্স বেড়েছে ১৫ কোটি ১৪ লাখ ডলার।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকার্সরা বলছেন, কয়েক মাস থেকে বৈধ পথে রেমিটেন্স আসা বাড়ছে ও ডলারের বিপরীতে টাকা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তাই রেমিটেন্স বাড়ছে; যা অর্থনীতির জন্য সুসংবাদ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে আসা এই রেমিটেন্স, ১৩০ কোটি ৪ লাখ ডলার গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২২ কোটি ২৯ লাখ ডলার বা ২০ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি।
দুই কারণে রেমিটেন্স বাড়ছে বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: প্রথমত, বৈধ পথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ। তাই ব্যাংকগুলো সেভাবে চেষ্টা করছে।
দ্বিতীয়ত, ডলারের বিপরীতে টাকা দুর্বল হয়েছে। প্রবাসীরা এখন ডলার পাঠালে আগের তুলনায় টাকা বেশি পাচ্ছে। তাই তারা হুন্ডিতে না পাঠিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠাচ্ছেন। এসব কারণেই রেমিটেন্স বাড়ছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক দেবাশিস চক্রবর্ত্তী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, হয়তো ব্যাংকগুলোর চেষ্টায় রেমিটেন্স বাড়ছে। তবে ঠিক কী কী কারণে বাড়ছে তা এই মুহূর্তে বলতে পারবো না। তথ্য সংগ্রহ করে অফিসিয়ালি জানতে পারেন। সেজন্য পরে যোগাযোগ করতে হবে।
সব সময় উঠানামার মধ্যেই থাকে রেমিটেন্স আয়। তাই দীর্ঘ মেয়াদে রেমিটেন্স বাড়াতে নতুন শ্রমবাজার খোঁজা ও দক্ষ শ্রমিক পাঠানো বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন: প্রবাসী আয় বাড়াতে বর্তমানে বিদেশে থাকা শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীল না থেকে নতুন শ্রম বাজার খুঁজে আরো বেশি শ্রমিক পাঠাতে হবে।
“তবে অদক্ষের চেয়ে দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে হবে বেশি। কারণ পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল ও ফিলিপাইনের শ্রমিকদের চেয়ে বাংলাদেশের শ্রমিকদের বেতন অনেক কম। এর মূল কারণ, বাংলাদেশের শ্রমিকরা দক্ষ নয়। ”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩১ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে এক কোটি ১৩ লাখ ডলার। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৯৫ কোটি ৯৫ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এক কোটি ৩৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে।
বরাবরের মতই বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে। ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ২৮ কোটি ২৫ লাখ ডলার। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলার এবং জনতার মাধ্যমে ৭ কোটি ৭১ ডলার রেমিটেন্স এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১১৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসে। দ্বিতীয় মাস আগস্টে আসে ১৪১ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১১৬ কোটি ২৭ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১২১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে ১১৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার, জানুয়ারিতে ১৩৮ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১১৪ কোটি ৯০ ডলার আর সর্বশেষ মার্চে এসেছে ১৩০ কোটি ৪ লাখ ডলার।
ইতিবাচক ধারায় থাকায় সব মিলিয়ে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে (জুলাই -মার্চ) ৯ মাসে রেমিটেন্স এসেছে মোট ১ হাজার ৭৬ কোটি ১৩ লাখ ডলার।
গত কয়েক বছরে ব্যাংকিং চ্যানেল বহির্ভূত অবৈধভাবে মোবাইল ব্যাংকিং হুন্ডির মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রবণতা বেড়ে যায়। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে প্রবাসী আয়ে। এ কারণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবৈধ লেনদেনের দায়ে বন্ধ করা হয় বিকাশের ২ হাজার ৮৮৭টি এজেন্টের নম্বর।