অস্ট্রেলিয়াকে ৩৬ রানে হারিয়ে নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছেছে ভারত। ব্যাটসওম্যান হারমানপ্রিত কৌরের রেকর্ডের পাতায় ‘তোলপাড়’ করা এক সেঞ্চুরির পর বোলারদের নৈপুণ্যে জয় তুলে নেয় মিতালি রাজের দল।
আগামী ২৩ জুলাই লর্ডসের ফাইনালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারণী পরীক্ষায় নামবে ভারত।
ডার্বিতে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বৃহস্পতিবার ৪২ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে শুরুতে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ২৮১ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ গড়ে ভারত। যার ১৭১ রানই আসে কৌরের ব্যাটে, অপরাজিত ইনিংসটি মাত্র ১১৫ বলে সাজিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। পরে জবাব দিতে নেমে ১৩ বল হাতে রেখে ২৪৫ রানে আটকে যায় অস্ট্রেলিয়া।
শুরুতে স্মৃতি মান্দানা (৬) ও পুনম রাউত ১৪ রানে ফেরার পর ভালোই বিপদে পড়েছিল ভারত। সেখান থেকে অধিনায়ক মিতালি রাজকে নিয়ে ৬৬ রানের প্রতিরোধ গড়েন কৌর। মিতালির ৩৬ রানের সংগ্রহটিই ইনিংসের দ্বিতীয় সেরা।
কৌর আসল কাজটি সারেন দীপ্তি শর্মাকে (২৫) সঙ্গী করে। দুজনে ১৩৭ রান যোগ করেন। যেখানে কৌরের অবদানই ১১২ রান। এই পথে ৯০ বলে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন এই ডানহাতি ব্যাটসওম্যান। দ্বিতীয় ফিফটি তুলেছেন মাত্র ২৬ বলে। তৃতীয়টি ১৭ বলে, আর শতকের পরের ৭১ রান তুলেছেন মাত্র ২৫ বলে। ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতকটি শেষপর্যন্ত ২০ চার ও ৭ ছয়ে ১৪৮.৬৯ স্ট্রাইকরেটে সাজিয়েছেন ২৮ বছর বয়সী মিডলঅর্ডার তারকা।
এটি বিশ্বকাপে ভারতের সর্বোচ্চ ইনিংস। তবে মেয়েদের ওয়ানডে ইতিহাসে পঞ্চম সর্বোচ্চ। মেয়েদের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ওয়ানডে ইনিংসটি অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি বেলিন্ডা ক্লার্কের, অপরাজিত ২২৯ রানের। ১৯৯৭ বিশ্বকাপে মুম্বাইয়ে ডেনমার্কের বিপক্ষে ইনিংসটি খেলেছিলেন। এই ম্যাচেই খেলা কৌরের সতীর্থ দীপ্তি শর্মার ১৮৮ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। চলতি বছরের শুরুর দিকে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ইনিংসটি খেলেছিলেন দীপ্তি।
তৃতীয় ইনিংসটি এসেছে চলতি বিশ্বকাপেই। শ্রীলঙ্কার চামারি আতাপাত্তু এই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই গ্রুপ পর্বে ১৪৩ বলে অপরাজিত ১৭৮ রানের ইনিংস খেলেছেন। ইংল্যান্ডের চার্লট এডওয়ার্ডের অপরাজিত ১৭৩ সেখানে চতুর্থ সেরা। তার পরেই থাকছে কৌরের ভারতকে ফাইনালে তোলা ইনিংসটি।
কৌরের ইনিংসটি চারে নেমে খেলা মেয়েদের ওয়ানডের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। তার আগে কেউ এই পজিশনে নেমে দেড়শ পার করতে পারেননি। নিউজিল্যান্ডের সোফি ডিভাইনের ২০১৩ সালে খেলা ১৪৫ রানের ইনিংসটিই ছিল আগের সেরা।
এদিন কৌর দলের প্রায় ৬০ শতাংশের ওপর রান তুলেছেন একাই। লঙ্কানদের চামারি আতাপাত্তু যেদিন রেকর্ড তছনছ করা ইনিংসটি খেললেন, সেদিন দলীয় সংগ্রহের ৬৯.২৬ শতাংশ রান এসেছিল তার ব্যাটে। ওটাই রেকর্ড। তার আগের রেকর্ডটি ছিল ইংল্যান্ডের লিনি থমাসের, ৬১.৯৪ শতাংশ। ১৯৮২ সালের সেই ম্যাচে ৭০ বলে ১১৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ইংলিশ তারকা। একক অবদানের এই তালিকায় তিনে চলে এলেন হারমানপ্রিত কৌর।
ক্যারিয়ারের ৭৭তম ওয়ানডে খেলতে নামা হারমানপ্রিতের গড়ে দেয়া মঞ্চের কাছেই বলতে গেলে হেরেছে সর্বোচ্চ ছয়বার মেয়েদের বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়া। তবে ভারতীয় বোলারদের অবদানও কম নয়। দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পর শক্ত প্রতিরোধ গড়েছিল অজিরা। জাগিয়েছিল জয়ের সম্ভাবনাও।
মিডলঅর্ডারে পেরি ৩৮, ভিল্লানি ৭৫ ও ব্লেকওয়েল ৯০ রানের ইনিংস খেলে শেষ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দীপ্তি শর্মা ৩টি, শিখা পান্ডে ও ঝুলন গোস্বামী ২টি করে উইকেট নিয়ে অজিদের পথ আগলে দাঁড়ান।