তিনি এখনো তিন ফরম্যাটেই অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানটা আলোকিত করে রেখেছেন। খুব বেশি এসপার-ওসপার হয়নি মাঠের পদচারণ ক্ষেত্রটাতেও! শুধু হিসেবের খাতায় গুটিকতক উইকেট ও রানের সংখ্যা কমেছে। সেটা নামের সঙ্গে বেমানান বলেই গেল গেল রব উঠেছিল। সাকিব আল হাসান এক ঝটকায় সেসব অতীতের গর্ভে ছুঁড়ে ফেললেন আরেকবার। নক্ষত্রের প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে। সঙ্গী হলেন দুঃসময়ের ঘেরাটোপ ছুঁড়ে ফেলা মাহমুদউল্লাহও।
এর আগে অনেকবারই সাকিবকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, ফিরে এসেছেন দারুণভাবে। তারপর সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুচকি হেসে বলেছেন, দেখলেন তো- আগের মত বল-ব্যাট করছি! শুক্রবারের পর আবারো তেমন কিছু বলতে দেখা গেলে অবাক হওয়ার থাকবে না।
মাহমুদউল্লাহ তেমন নন। বুক ফাটে মুখ ফোটে না টাইপের। নীরবে সয়ে যান যাতনা। দল থেকে বাদ পড়ার খুব কাছে চলে এসেছিলেন। টেস্টে তো জায়গাই খুইয়েছেন। সেই মাহমুদউল্লাহরও আরেকবার জন্ম হল। বড় মঞ্চেই। ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি। আগের দুটি টানা দুম্যাচে, গত বিশ্বকাপে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই করেছিলেন যার একটি। সে ম্যাচেও ছিলেন অপরাজিত।
কার্ডিফে শুক্রবার যে মহাকাব্য লেখা হল, তার অন্যতম দুই কুশীলবের এই সাকিব ও মাহমুদউল্লাহই।
সাকিব উইকেটে এলেন ততক্ষণে টপ তিন তামিম, সৌম্য, সাব্বির সাজঘরে, পথটা নিঃসঙ্গ করে ফিরে গেলেন মুশফিকও। দল তখন ধুঁকছে। অনেক সমালোচনার তীরের ডগায় থাকা সাকিবের দিকে তখন সবার চোখ। সঙ্গী মাহমুদউল্লাহ।
অনেকে হয়তো বলছিলেনও, এই সকিবে তো ভরসা নেই। সেরা ফর্মে থাকার সময়ই কত ছুঁড়ে এসেছেন, এবার তো ঘুমিয়ে আছে ব্যাট! পাঁচ ম্যাচ আগেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা দুটি ফিফটি আছে। সাকিব এদিনও ছুঁড়ে এসেছেন। তবে উইকেট নয়, বোল্ট-সাউদিদের গোলাগুলো, সীমানার ওপারে।
শেষপর্যন্ত ১১৪ রানে থেমেছেন, ১১৫ বলে ১১ চার ও এক ছয়ে। ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি এটি। সঙ্গী মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ১০২ রানে, ১০৭ বলে ৮ চার ও ২ ছয়ে। ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক। দুজনের জুটিতে রেকর্ড রান যোগ হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশের ওয়ানডের ইতিহাসে সর্বোচ্চ জুটি ছিল ১৭৮ রানের, পাকিস্তানের বিপক্ষে, ঢাকায় ২০১৫ সালে। জুটিটি ছিল তৃতীয় উইকেটে। এবার সেটি পৌঁছাল ২২৪ রানে। দুইশ রানের প্রথম জুটি! চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সেরা জুটি।
সাকিব-মাহমুদউল্লাহ জুটির রেকর্ডের পথে আরো কিছু মাইলফলক গড়েছেন। কার্ডিফে যেকোন দেশের পক্ষে যেকোন উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি এটিই। ভেঙেছেন দ্রাবিড়-কোহলির ২০১১ সালে গড়া ১৭০ রানের জুটি, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এটি পঞ্চম উইকেটেও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি। ১১ বছর আগের ব্রায়ান লারা-রুনাকো মর্টনের ১৩৭ রানের জুটি এখন পেছনে। ইংল্যান্ডের মাঠে যেকোন দলের হয়ে পঞ্চম উইকেটেও সর্বোচ্চ জুটি।
নিজের জাতটা আরেকবার মনে করিয়ে দেয়ার জন্য সাকিবের অবশ্য অনুপ্রেরণার অভাব ছিল না। বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বরাবরই জ্বলে উঠেছেন। ২১ ম্যাচে ৩০-এর ওপর গড়ে সাড়ে পাঁচশ রান। দুই সেঞ্চুরির সঙ্গে তিন ফিফটি। আর বোলিংয়ে সমান ম্যাচে ৩৫ উইকেট। ক্যারিয়ারে সাতবার ম্যাচে ৪ বা এর বেশি উইকেট নিয়েছেন, তিনবারই কিউইদের বিপক্ষে।
গত নিউজিল্যান্ড সফরে ডাবল সেঞ্চুরিও করেছেন টেস্টে। তার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিও কিউইদের বিপক্ষে। আবারো সামনে সেই নিউজিল্যান্ডকে পেয়েই জ্বলে উঠলেন। প্রত্যাবর্তন হল চিরচাওয়া সাকিবের, প্রত্যাবর্তন হল ভরসা মাহমুদউল্লাহর, প্রত্যাবর্তন হল নক্ষত্রের।