চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে এমন দুই দল মুখোমুখি, যাদের নিয়ে দুদেশেই ফ্যান্টাসি রচনা করা যায়। এক দল নিজ দেশের লিগ জিততে পারেনি। অন্য দলও লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড় থেকে অনেক দূরে। কিন্তু ইউরোপের বাঘা ক্লাবের সঙ্গে তারা লড়াই যে পর্যায়ে নিয়ে গেছে তাকে স্বচ্ছন্দে রূপকথাই বলা যায়। এএস রোমা ও লিভারপুলের সেই রূপকথার লড়াইয়ের প্রথম লেগ বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে।
মৌসুমের শুরুতে কেউই হয়ত ভাবেনি লিভারপুল কিংবা এএস রোমার মধ্যে কোনো এক দল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে! এমনটা কেউ ভাবলে সেটা নিয়ে হাসাহাসির সঙ্গে প্রশ্ন উঠতে পারত তার ফুটবলজ্ঞান নিয়েও!
তাছাড়া কে ভেবেছিল বার্সার মাঠে ৪-১ গোলে হারার পরও রোমা ফিরতি লেগে ৩-০তে জিতে সেমিফাইনাল খেলবে? আর ইউরোপ সেরার আসরে লিভারপুলের পুনরুত্থানও কম বিস্ময়কর নয়। প্রিমিয়ার লিগ জয়ী ও মৌসুমজুড়ে দোর্দণ্ডপ্রতাপ ছড়ানো ম্যানচেস্টার সিটিকে বিধ্বস্ত করে সেমিতে উঠেছে অলরেডরা। এখন দুই হিসেবের বাইরে থাকা দলই মুখোমুখি ফাইনালের মিশনে।
লিভারপুল-রোমার লড়াই ফিরিয়ে আনছে ১৯৮৪ সালের পুরনো এক স্মৃতিকে। সেবার ইউরোপ সেরার মঞ্চে তৎকালীন ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল এ দুই প্রতিপক্ষ। রোমে ১-১ গোলে ড্র থাকা ম্যাচটি গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে। যেখানে ৪-২ গোলে স্বাগতিক রোমাকে হারিয়ে শিরোপা উৎসবে মেতেছিল লিভারপুল। ৩৪ বছর পর আবারো ফাইনালে যাওয়ার মিশনে ‘অলরেডদের’ সামনে পাচ্ছে রোমা। এবার নিশ্চয়ই সেই পুরনো প্রতিপক্ষের কাছে সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবে না ইতালির দলটি। প্রতিশোধ নিয়েই ফাইনালে যেতে চাইবে তারা।
অন্যদিকে পাঁচবার ইউরোপসেরা হওয়া লিভারপুলের সামনে ১৩ বছর পর ফাইনালে ওঠার হাতছানি। সর্বশেষ ২০০৪-০৫ মৌসুমে অবিশ্বাস্য ফাইনালে এসি মিলানের বিপক্ষে হেরেছিল ইংলিশ দলটি। এবার ইয়ুর্গেন ক্লপের নেতৃত্বে থাকা দলটি পূরণ করতে চাইবে নিজেদের ‘মিশন’।
সেমিফাইনাল খেলতে আসা চার দলের মধ্যে একমাত্র লিভারপুল এখন পর্যন্ত অপরাজিত দল। ক্লপের লিভারপুল এ মৌসুমে সবচেয়ে প্রশংসিত দলও বটে। ফলনির্ভর ফুটবল একপাশে রেখে প্রেসিং ফুটবলের সৌন্দর্যে মৌসুমজুড়ে মাঠ মাতিয়েছে সালাহ-ফিরমিনো-মানেরা। এমনকি দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য তারকা ফিলিপে কৌতিনহোর মাঝ মৌসুমে দলবদলের প্রভাবও মাঠের লড়াইয়ে পড়তে দেননি বাকি খেলোয়াড়রা।
বিপরীতে রোমার লিগে অবস্থান ভালো না হলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। গ্রুপ পর্বে চেলসি ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মতো দলকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নকআউট পর্বে উঠেছিল তারা। সেখান শাখতার দোনেস্ককে পেছনে ফেলে কোয়ার্টারে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় বার্সেলোনাকে। একপর্যায়ে বার্সার কাছে ন্যু ক্যাম্পে ৪-১ গোলে হেরে বিদায়ের ক্ষণ গুনছিল ‘ইয়েলো রেডস’খ্যাত দলটি। কিন্তু পরের লেগে রোমে অবিশ্বাস্য ফুটবল খেলে বার্সা ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে সেমির টিকিট পায় তারা।
এমন তাপ ছড়ানো ম্যাচে রোমার জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম মোহাম্মদ সালাহ। অথচ গত মৌসুমে রোমার জার্সিতেই খেলেছিলেন এই মিসরীয় জাদুকর। দলবদলের পর লিভারপুলের জার্সিতে মুহূর্তেই যেন বদলে গেছে সবকিছু। মৌসুমে অপ্রতিরোধ্য সালাহ ভেঙে দিয়েছেন বেশকিছু রেকর্ড। এরইমধ্যে জিতে নিয়েছেন প্রফেশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (পিএফএ) দেয়া ইংল্যান্ডের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও। তবে এসব কিছুই নয়, সালাহর দৃষ্টি এখন কেবল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রূপালি শিরোপাটির দিকে।
রোমাকে সেমিতে তোলার পেছনে দারুণ অবদান রেখেছেন এডিন জেকো। এ মৌসুমে রোমার জার্সিতে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে চলেছেন বসনিয়ান তারকা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ছয় গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন আরো দুই গোলে।
১৩ বছর আগে অবিশ্বাস্য ফাইনালে এসি মিলানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লিভারপুল। সেবার তারা ফেভারিট ছিল না। এবারও না। কাকতালীয় হলেও সত্য, সেমিফাইনালে এবারও তাদের প্রতিপক্ষ এক ইতালিয়ান দল। জেরার্ড-জাভি আলোনসোর দিকে চেয়ে উদ্দীপ্ত হতে পারেন সালাহ-ফিরমিনোরা।
মোটিভেশন থাকছে রোমার সামনেও। ৩৪ বছর আগে হারের গল্প শোনা রোমার বর্তমান খেলোয়াড়রা নিশ্চয়ই বদলা নিতে চাইবেন লিভারপুলের বিরুদ্ধে। ১৯৮৪ সালের হারের পর সেই দলের সদস্য ব্রুনো কোন্তি বলেছিলেন, ‘একদিন নিশ্চয়ই লিভারপুলকে হারিয়ে বদলা নেবে রোমা’।