রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের রেষারেষিটা বহু দিনের পুরনো। সিরিয়া ইস্যুতে সেই তিক্ত আরও বেড়েছে। আর মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই চলছে তুমুল হইচই। এর মধ্যে প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসে সামরিক ক্ষেত্রে আরও বেশি দায়িত্ব নিতে বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিরিয়া নিয়ে রুশ-মার্কিন উত্তেজনা আর ট্রাম্পের আহ্বানের সুযোগ নিয়ে নিজেদের সামরিক শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি করছে এক সময়ের পরাশক্তি জার্মানি। অর্থনীতিতে ইউরোপের অন্যতম ‘সুপার পাওয়ার’ জার্মানির গোপন মিশনের কথা এক বিশেষ প্রতিবেদনে জানিয়ে মার্কিন দৈনিক দ্য ওয়াশিংটন পােস্ট। প্রায় একই একটি প্রতিবেদন ছেপেছে আরেক মার্কিন ম্যাগাজিন ফরেন পলিসি।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাৎসি ভয়াবহতার পরমুহূর্তে জার্মানরা সামরিকতন্ত্রকে যে প্রত্যাখ্যাত করেছিল এই সুযোগে সেটা আবার ফেরাচ্ছে তারা।
এতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরের নির্বাচনের পর থেকে ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র এবং ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়ার মধ্যে সখ্যতায় মার্কিনিরা কম নিরাপদ বোধ করছে। সেই ধাক্কায় এখন জোর বাড়াচ্ছে জার্মানরা।
সামরিক শক্তি বাড়ানোর কাজটা লিথুয়ানিয়া থেকে শুরু করেছে জার্মানি। সেখানে ৫০০ বেশি জার্মান সেনা রয়েছে। সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে জার্মান এলিট ফাের্সের বেশ কয়েক ব্যাটেলিয়ান সেনা রুশ ফন্টিয়ারের কাছে মোতায়েন করা হয়েছে। ২০টি সাঁজোয়া পদাতিক যুদ্ধ যান, ছয়টি চিতা যুদ্ধ ট্যাংক এবং ১২টটি বক্সার সাঁজোয়া ও কর্মী সহ এটা ছিল জার্মান বাহিনীর একটি দুর্দান্ত প্রদর্শনী। শীতল যুদ্ধের অবসানের পর রাশিয়ান সীমান্তের কাছে জার্মানির সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী সামরিক অপারেশন এটা বর্ননা করেছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো।
লিথুয়ানিয়া ছাড়াও বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড এবং নরওয়েতে ছোট সংখ্যায় সেনা মোতায়েন করেছে জার্মানি। এর মাধ্যমে পুতিন এবং ইউরোপকে একটি বার্তা দিতে চাইছে ব্রাভেরিয়ানরা।
তবে জার্মানি এমন কার্যক্রম সম্পর্কে রাশিয়া যে একেবারেই অন্ধকারে তেমন না। সম্প্রতি লিথুয়ানিয়া পুলিশ, মিডিয়া ও রাজনীতিবিদের কাছে ই-মেইল আসে যে, ১৫ বছরের এক কিশোরীকে গণধর্ষণ করেছে জার্মান সেনারা। লিথুয়ানিয়া সরকার দ্রুতই সেটা ভূয়া বলে প্রমাণ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে প্রচুর আলোচনা-সমালোচনার পর সরকার এ বিষয়ে তদন্ত করে। তদন্তে দেখা যায় এমন গুজবের পেছনে কাজ করেছে রাশিয়া।
জার্মান সেনা মোতায়েনকে ন্যাটো এবং রাশিয়া বর্ননা করছে, দ্বিতীয়বারের মতো লিথুয়ানিয়ায় জার্মান অভিযান হিসেবে। জার্মানদের অতীত সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার বেশ কিছু ঘটনা নিয়ে মস্কোতে একটি পার্ক বানানো হয়েছে। যেখানে তরুণদের অধিকহারে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লষকরা এটাও বলছেন যে, ট্রাম্পের বক্তব্যের পর ন্যাটো অনিশ্চতায় পড়ায় দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া বলয়ে থাকা লিথুয়ানিয়া শক্তিশালী জার্মানির দিকে ঝুঁকছে এবং জার্মানরাও সেই সুযোগ নিচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জার্মানির সামরিক বানানোর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে একটি জরিপেও। যেখানে দেখা যায় ৫৫ শতাংশ জার্মান সামরিক ব্যয় বাড়ানোর বিপক্ষে থাকলেও ৪২ শতাংশ পক্ষে ভােট দিয়েছে। কয়েক বছর আগের তুলনায় পক্ষের ভােট এখন অনেক বেশি।
গত বছর সামরিক বাজেটও ২ শতাংশ বাড়ানোর ন্যাটাের সঙ্গে একমত হয় জার্মানি। যদিও মূল আসল সংখ্যা ৮ শতাংশ। এটা অনেকটা কৌশল হিসেবে দেখছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। গত ১০ বছরে মধ্যে ২০১৬ সালেই সামরিক বাজেট সর্বোচ্চ ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়ায় জার্মানরা।
ট্রাম্পের জয়ের পর জার্মানির রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়া সামরিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয়ে তাদের কণ্ঠ জোড়ালো করেছেন। গত মাসে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘােষণা করে ২০২৪ সালের মধ্যে স্থায়ী সামরিক বাহিনীর সংখ্যা ২ লাখে উন্নীত করা হবে। গত বছরের জুনেও জার্মানির সামরিক বাহিনীর সদস্য ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে কম ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০। ২৬ বছর ধরে কমানো সামরিক বাজেটও তারা বাড়িয়েছে ৮ শতাংশ।
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেলকে ঠান্ডা মাথার বলা হলেও তিনি সামরিক ব্যয় বাড়িয়ে চলছেন। আর প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ভন ডার লিয়েন সম্প্রতি বলেছেন, জার্মানি তার সামরিক দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।