সাবেক রুশ গুপ্তচর ও তার মেয়েকে হত্যা চেষ্টার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিশ্বের দুই পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব ও রাশিয়ার সম্পর্ক। ওই ঘটনার জের ধরে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স বলেন, তাদের দেশে কোন রুশ গুপ্তচর পেলে তারাও বহিষ্কার করতেন। তবে তাদের দেশে কোন রুশ গুপ্তচরের অবস্থান নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে দি গার্ডিয়ান পত্রিকা এ তথ্য প্রকাশ করেন।
মার্চের ৪ তারিখ, সলসবাড়িতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একজন ব্রিটিশ নাগরিক এবং তার মেয়েকে হত্যার জন্য মিলিটারি-গ্রেড নার্ভ অ্যাজেন্ট ব্যবহার অভিযোগ এনে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে ১০০ জনের বেশি রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়। ওই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এই মন্তব্য করলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স বলেন, নিউজিল্যান্ড সের্গেই স্ক্রিপাল এবং তার মেয়ের ওপর নার্ভ এজেন্ট আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানায়।
‘নিউজিল্যান্ডে অবস্থানরত রাশিয়ান অ্যাম্বাসিডরকে জরুরি মিটিং-এ ডেকে পাঠানো হয়। সলসবাড়ির ঘটনায় নিউজিল্যান্ডের উদ্বেগের কথা মস্কোকে জানাতে বলা হয়। ’
‘সলসবাড়ির ওই অাক্রমণের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে প্রয়োজনে আরো পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছে। ’
‘যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থনের অংশ হিসাবে আমরা সম্ভাব্য ভবিষ্যতের কর্মের পর্যালোচনা করব এবং আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখব “
এর আগে ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্ক থেকে ৬০ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে সিয়াটলে রাশিয়ান কনস্যুলেট বন্ধ করারও ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি ইউরোপিয়ানের কয়েকটি দেশও রুশ কূটনীতিকদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। যাদের মধ্যে রয়েছে; জার্মানি, ফ্রান্স ও ইউক্রেন।
তিন সপ্তাহ আগে ব্রিটেনে একজন সাবেক ডাবল এজেন্ট সের্গেই স্ক্রিপাল এবং তার মেয়ের ওপর নার্ভ এজেন্ট আক্রমণের প্রতিক্রিয়াতেই এমন পদক্ষেপ।
ঘটনার পর যুক্তরাজ্য ২৩ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করে। জবাবে রাশিয়াও দেশটিতে যুক্তরাজ্যের একই সংখ্যক কূটনীতিককে বহিষ্কার করে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ এর দেশগুলোর এমন পদক্ষেপের পর রাশিয়ার পক্ষ থেকেও ঘোষণা এসেছে এর ‘আনুপাতিক’ জবাব দেওয়ার।
তবে সের্গেই স্ক্রিপাল এবং তার মেয়ের উপর হামলার কথা অস্বীকার করে রাশিয়া।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা যুক্তরাজ্যের সাথে ‘সংহতির বিকৃত ব্যাখ্যার জন্য’ ইইউ এর নিন্দা জানিয়েছে।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, ইইউ এর ১৪ টি দেশ রুশ কূটনীতিকদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সলসবেরিতে নার্ভ অ্যাজেন্ট প্রয়োগ বিষয়ে গত সপ্তাহের বৈঠকের সরাসরি পদক্ষেপ হিসেবে একে অভিহিত করেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের সাথে সংহতি জানিয়ে সোমবার বেশ কয়েকটি দেশ রুশ কূটনীতিক বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করে। দেশগুলো হলো-
যুক্তরাষ্ট্র- ৬০ জন কূটনীতিক, ইউক্রেন- ১৩ জন কূটনীতিক, পোল্যান্ড- ৪ জন কূটনীতিক, ফ্রান্স- ৪ জন কূটনীতিক, জার্মানি- ৪ কূটনীতিক, কানাডা- ৪ কূটনীতিক, চেক রিপাবলিক- ৩ কূটনীতিক, লিথুয়ানিয়া- ৩ কূটনীতিক, নেদারল্যান্ডস- ২ কূটনীতিক, ইতালি – ২ কূটনীতিক, ডেনমার্ক- ২ কূটনীতিক, এস্তোনিয়া- ১ কূটনীতিক, লাটভিয়া- ১ কূটনীতিক, ক্রোয়েশিয়া- ১ কূটনীতিক, ফিনল্যান্ড- ১ কূটনীতিক এবং রোমানিয়া- ১ জন কূটনীতিক।
ওয়াশিংটনের রাশিয়ান দূতাবাস থেকে ৪৮ জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করে যুক্তরাষ্ট্র। বহিষ্কৃত অন্যান্যরা হলেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কূটনীতিক।