যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রাবেয়া সুলতানা রুবি এখন সালমান শাহ্র মৃত্যুর জন্য জোরালো ভাবে তার স্ত্রী সামিরাকে দায়ি করছেন। তিনি বলছেন, ‘আমার বড় ছেলে (ভিকি) সেদিনের সালমান শাহ্র মৃত্যুর ঘটনার বড় সাক্ষী। যে সামিরার দেওয়া জিনিস এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে পার করেছে। ওদের বাসা থেকে আমাদের বাসার ছাদে একটা কাপড়ের পুঁটলি পাচার করেছে আমার ছেলেকে দিয়ে, যেদিন ইমন (সালমান শাহ) মারা যায়। সামিরার কাপড়ের পুঁটলিটি আমার ছেলের হাতে দিয়েছিল পার করতে। তখন আমার ছেলের বয়স ছিল ১৭ বছর।’ রাবেয়া সুলতানা রুবি এখন আছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। তবে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন পেনসিলভানিয়ায়। সালমান শাহ্ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি।
আজ ৮ আগস্ট মঙ্গলবার দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাবেয়া সুলতানা রুবি জানান, সালমান শাহর মৃত্যুর পুরো বিষয়টি নিয়ে কনসাল জেনারেলের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য নিউইয়র্কে এসেছেন। তার সঙ্গে দেখা করে তিনি পেনসিলভানিয়ায় ফিরে যাবেন। তবে শিগগিরই বাংলাদেশে আসার কোনো ইচ্ছা তার নেই।
সালমান শাহ্ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি রাবেয়া সুলতানা রুবি গত ৬ আগস্ট রোববার ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। যেখানে তিনি স্বীকার করেন, গত শতকের নব্বই দশকে চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সফল নায়ক সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি নিজে এতে যুক্ত না থাকলেও তার স্বামী চীনা নাগরিক জ্যানলিন চ্যান, ছোট ভাই রুমী, সালমান শাহর স্ত্রী সামিরাসহ আরও কয়েকজন এই হত্যার ঘটনায় জড়িত ছিলেন বলে উল্লেখ করেন।
রুবি জানান, তার ছেলে ভিকি এখন থাকে কানাডাতে। গত জুলাই মাসে ছেলের কাছে তিনি বেড়াতে যান। তখন সামিরার এই ঘটনাটি মাকে জানান ভিকি। এর পরই তিনি ভিডিওটি লাইভ করেন। তবে সেই কাপড়ের পুঁটলির কী হয়েছিল, তা তিনি জানেন না।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, স্বামী চীনা নাগরিক জ্যানলিন চ্যানের সঙ্গে দাম্পত্য কলহের কারণে রুবি এসব অভিযোগ করেছেন। রুবি বলেন, ‘দাম্পত্য কলহ কেন হবে না বলেন তো? যখন আমি জানি সব কিছু। আমি কি স্বামীর সঙ্গে অভিনয় করে যাব নাকি! এটা তো হবেই। যখন আমি জানব, আমার স্বামী কোনো কিছুর (হত্যাকাণ্ড) সঙ্গে জড়িত। আমার ছেলেও তো জড়িয়েই পড়েছিল। তার বয়স তখন ১৭। গার্লফ্রেন্ডও ছিল। নইলে অনেক কিছুই ঘটতে পারত! ৩২ বছর আমি তার (জ্যানলিন) সঙ্গে সংসার করছি। দাম্পত্য কলহ হলে তো আমি তাকে ডিভোর্স করতাম। ওরে ডিভোর্স করলে আমি ওর বাড়ি পেয়ে যেতাম। কারণ সাড়ে ১৫ বছর আমরা এই বাড়িতেই আছি।’
ভিডিওতে রুবি বলেছেন, তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এখন স্বামীর কাছে ফিরে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে রুবি বলেন, ‘আমি নিরাপত্তাহীনতা ফিল করেছি। কেউ থ্রেট দেয়নি। সাড়ে ১৫ বছর আমেরিকায় আছি। এমনি তো ডাল-ভাত খাই। আইন সম্পর্কে আমার যথেষ্ট ধারণা আছে। আমি সেভাবেই এগুব।’
রাবেয়া সুলতানা রুবি থাকতেন সালমান শাহর ফ্ল্যাটের অর্থাৎ ইস্কাটন প্লাজার উত্তর পাশের বিল্ডিংয়ে। তিনি রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রশিদের মেয়ে। প্রয়াত ক্যাপ্টেন জামিল ছিলেন তার বর। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর যে ১৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়, তার স্বামী ছিলেন তাদের একজন। ক্যাপ্টেন জামিলের সংসারে জন্ম নেওয়া পুত্র ভিকিকে নিয়ে ৩১ বছর আগে তিনি চীনের এক নাগরিককে বিয়ে করেন। সালমানের মৃত্যুর কয়েক বছর পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন। সেখানেই স্বামী-সন্তান নিয়ে বাস করছেন তিনি।