টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে রুপা গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ২৭ জনের সাক্ষী ও জেরা সমাপ্ত হয়েছে। আদালত মঙ্গলবার দুপুরে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ সমাপ্ত করেছেন। ২৮ জানুয়ারি ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আদালতে আসামীদের পরীক্ষার জন্য দিন ধার্য করেছেন।
টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় এই চাঞ্চল্যকর মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মধুপুর অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরির্দশক আদালতের সাক্ষীর কাঠগড়ায় আহরণ করেন। পরে আসামীপক্ষের আইনজীবীরা তদন্তকর্মকর্তাকে ২ ঘণ্টাব্যাপী জেরা করেন।
এর আগে গত রোববার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন। পরে আসামী পক্ষের আইজীবীরা ২ দফায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী তদন্ত কর্মকর্তাকে আংশিক জেরা করেন।
গত ৩ জানুয়ারি বাদির সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যদিয়ে এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ২০ দিনের মধ্যে এই মামলায় জব্দ তালিকা, সুরতহাল রিপোর্ট, ৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৭ সাক্ষীর আদালতে সাক্ষ্য ও জেরা সমাপ্ত হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে এই মামলা পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পি.পি. এড. নাছিমুল আক্তার। তাকে সহায়তা করেন মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার টাঙ্গাইল জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ। আসামী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট শামীম চৌধুরী দয়াল ও অ্যাডভোকেট দেলুয়ার হোসেন।
গত ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রুপা খাতুনকে চলন্ত বাসে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্ষণ করে। পরে তাকে হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে রেখে যায়। পুলিশ ওই রাতেই তার লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বাদি হয়ে মধুপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
রুপার ভাই ২৮ আগস্ট মধুপুর থানায় এসে লাশের ছবি দেখে রুপাকে সনাক্ত করেন। পরে পুলিশ ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর (৪৫), সুপারভাইজার সফর আলী (৫৫) এবং সহকারি শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) কে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের কাছে তারা রুপাকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে।
২৯ আগস্ট বাসের তিন সহকারি শামীম, আকরাম, জাহাঙ্গীর এবং ৩০ আগস্ট চালক হাবিবুর এবং সুপারভাইজার সফর আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তারা সবাই এখন টাঙ্গাইল কারাগারে আছে।
৩১ আগস্ট রুপার লাশ উত্তোলন করে তার ভাইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তাকে সিরাজগঞ্জের তাঁরাশ উপজেলার নিজ গ্রাম আসানবাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।