রিয়াল মাদ্রিদ নাকি ম্যানচেস্টার সিটি— ইউরোপ সেরা হতে স্প্যানিশ লা লিগা ও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ দল দুটির বাকি দুধাপ। সমীকরণ এমন, শিরোপার পথে ইংল্যান্ড-স্পেনের সেরাদের প্রথমেই ছাপিয়ে যেতে হবে একে-অন্যকে। সে লক্ষ্যে পেপ গার্দিওলার প্রত্যয়ী সিটির বিপক্ষে ইতিহাদে মুখোমুখি হচ্ছে দুর্দান্ত ধারাবাহিক কার্লো আনচেলত্তির রিয়াল।
মঙ্গলবার রাতে সিটিজেনদের মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে প্রথম লেগের লড়াইয়ে নামবেন বেনজেমা-ভিনিসিয়াসরা। বাংলাদেশ সময় রাত একটায় শুরু হবে ম্যাচ, সরাসরি দেখাবে সনি টেন-২। ৪মে পরের লেগে বার্নাব্যুতে আতিথেয়তা নেবে পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা।
পরিসংখ্যান, শক্তিমত্তা কিংবা নক আউটে খেলার অভিজ্ঞতা— সমীকরণ টানলে বর্তমান সময়ে রিয়াল বা সিটি কেউ কারো থেকে কম নয়! রিয়ালের তিন স্ট্রাইকার করিম বেনজেমা, রদ্রিগো ও ভিনিসিয়াস জুনিয়র যেমন দুর্দান্ত ফর্মে আছেন, তেমনি নিজেদের শক্তিমত্তায় পুরো বিশ্বাস রাখছেন জ্যাক গ্রিলিশ, ফিল ফোডেন, গ্যাব্রিয়েল জেসাসরা।
ইউরোপ সেরার মুকুট অর্জনের দিক থেকে অবশ্য যোজন এগিয়ে লস ব্লাঙ্কোস দল। সিটিজেনরা গতবার চেলসির কাছে শিরোপা হাতছাড়া করেছিল— চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসে ইংলিশ ক্লাবটির সেরা অর্জনও সেটাই। অন্যদিকে, এই মঞ্চে সর্বোচ্চ সফল দল মাদ্রিদ রাজারা, এপর্যন্ত ১৩ বার শিরোপা উদযাপনে মেতেছে স্প্যানিশ জায়ান্ট দলটি।
ইউরোপিয়ান ফুটবলে আগে ছয়বার মুখোমুখি হয়েছে সিটি-রিয়াল। ২০১২-১৩ সালের পর প্রতিটি লড়াই হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মঞ্চে। ব্লাঙ্কোসদের বিপক্ষে শুরুর চারটি ম্যাচে (দুটি ড্র, দুটি হার) জয় না পেলেও পরের দুটিতে জিতেছে ম্যানসিটি। ২০১৯-২০ আসরের শেষ ষোলোতে ওঠার লড়াইয়ে রিয়ালকে বিদায় করে দুটি লেগেই জিতেছিল গার্দিওলার দল।
পিএসজি, চেলসিকে টপকে সেরা চারে আসা রিয়াল ইউরোপ সেরার মঞ্চে সিটির বিপক্ষে শেষ তিনবারের দেখায় একটিতেও জিততে পারেনি (দুটি ড্র, একটি হার)। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের কোনো ক্লাবের বিপক্ষে অ্যাওয়ে হিসেবে শেষ ছয়টি ম্যাচের মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে ব্লাঙ্কোসরা।
কোচদের পরিসংখ্যানেও এগিয়ে সিটি কোচ গার্দিওলা। নিজেদের দেখায় আনচেলত্তির দুটি জয়ের বিপরীতে চারটি জয় পেয়েছেন স্প্যানিয়ার্ড কোচ গার্দিওলা।
পরিসংখ্যান এবং ইতিহাসে যদিও বিশ্বাস নেই সিটি কোচের, ‘যদি ইতিহাসের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়, তবে আমাদের কোনো সুযোগ নেই— তারা এখানে সেরা। রিয়াল বহুবার এই প্রতিযোগিতায় এসেছে। গত দশকের আগে আমরা ছিলাম না, এখানেও ছিলাম না।’
রিয়াল আগে অনেকবার নকআউট খেলেছে, শক্তিমত্তা, অভিজ্ঞতা এবং শিরোপায় এগিয়ে— অবশ্য এতকিছু ভাবতে নারাজ গার্দিওলা, ‘ইতিহাস পরিবর্তন করতে পারবো না। কিন্তু আজ লড়াই ১১ বনাম ১১ জনের, মাঠে একটি বলের এবং খেলোয়াড়রা সিদ্ধান্ত নেবেন কী করা উচিত আর কী নয়।’
প্রত্যয়ী সিটির বিপক্ষে একটি কমপ্যাক্ট দল আশা করছেন রিয়াল কোচ আনচেলত্তি। তার মতে, সুযোগ পেলে প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ দলটি কোনো ছাড় দেবে না। ইতালিয়ান কোচের লক্ষ্য তাই রক্ষণাত্মক খেলে যথাসম্ভব আক্রমণে ওঠা এবং সর্বোপরি জয় নিশ্চিত করা।
‘ম্যাচে রক্ষণাত্মক দিকটি অনেক গুরুত্ব বহন করবে। এমন সময় আসবে যখন ম্যানসিটির কোর্টেই বল থাকবে। এটি খুবই স্বাভাবিক। যদি তারা এটা করে তা তাকিয়ে দেখার কিছু নেই, থামাতে হবে এবং সেটা উতরে যেতে চেষ্টা করতে হবে। সেখানে উচ্চ, মাঝারি বা অল্প— যে ধরনের চাপই থাকুক।’
ফাইনালে ওঠার প্রথম মহারণে দারুণ এক ব্যক্তিগত সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে আছেন সিটি স্ট্রাইকার রাহিম স্টার্লিং। ইউরোপ সেরার আসরে ইংলিশম্যান এখন পর্যন্ত ২৪ বার জাল খুঁজে পেয়েছেন। যদি এই ম্যাচে গোল পান, পল স্কোলসকে (২৪ গোল) ছাপিয়ে যাবেন। কোনো প্রতিযোগিতার হিসেবে ইংলিশ খেলোয়াড় হিসেবে তালিকায় সবার উপরে আছেন ওয়েইন রুনি (৩০)।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে সবসময় অপ্রতিরোধ্য রিয়াল মাদ্রিদ। অপরদিকে লিগ শিরোপা জিততে সিটিজেনরা কোনো অংশে কম এগিয়ে নেই। ইতিহাদে তাই ইউরোপ সেরার মঞ্চের জমজমাট এক নকআউটেরই এখন অপেক্ষা।