একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় বুধবার রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত বিশেষ আদালতে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন ঘোষণা করবেন।
গুরুত্বপূর্ণ এ রায়কে কেন্দ্র করে যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজধানীসহ দেশজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে রয়েছে আইন-শৃ্ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
বিশেষ আদালতে থাকবে কয়েক স্তরের নিরপত্তা
পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরান কেন্দ্রীয় কারাগারে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এখানে থাকবে কয়েকস্তরের আলাদা নিরাপত্তাবলয়।
নাজিম উদ্দিন রোডের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ঘিরে পুরো এলাকায় কয়েকস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে। বিপুল সংখ্যক পোষাকধারী পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন রয়েছে সাদা পোষাকের গোয়েন্দা পুলিশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার সকাল থেকে নাজিম উদ্দিন রোড এলাকার প্রবেশপথগুলোতে কাটা তারের ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশের সতর্ক প্রহরা লক্ষ্য করা গেছে।
চাঁনখারপুল থেকে শুরু করে আশে-পাশের সড়কগুলোতে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জনসাধারনের প্রবেশে রয়েছে কড়াকড়ি, সন্দেহ হলেই পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তল্লাশি শেষে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।
পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারসহ আশ পাশের এলাকায় ব্যাপক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি র্যাব, এসবি ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়োজিত আছে।
এছাড়া, শাহবাগ, ফার্মগেট, বকশিবাজার এলাকায় বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। আদালত ভবনের চারপাশে বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। বহিরাগতদের প্রবেশে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
পুলিশ সূত্র জানায়, আসামিদের নিয়ে ইতোমধ্যে কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আনা হয়েছে। যথাসময়ে আসামিদের এজলাসে হাজির করা হবে। এরপর বিচারক আদালতে এসে রায় পড়ার কার্যক্রম শুরু করবেন।
পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, রায়কে ঘিরে পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। রায়কে ঘিরে কোন ধরনের অপতৎপরতার আশঙ্কা নেই, তবে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।
রাজধানীর প্রবেশ পয়েন্টে চেকপোস্ট
রাজধানী ঢাকার প্রবেশমুখের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মঙ্গলবার রাত থেকেই র্যাব-পুলিশের অর্ধশতাধিক চেকপোস্টের মাধ্যমে তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। জোরদার করা হয়েছে টহল ব্যবস্থাও। রায়ের দিন সকাল থেকেই রাজধানীর বিশেষ স্থাপনা এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন থাকবে, প্রস্তুত থাকবে সাজোয়া যান ও জলকামান। রায়কে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হলে তা শনাক্ত করতে সক্রিয় রয়েছে সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
সারা দেশে বাড়তি নিরাপত্তা
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়কে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ইতোমধ্যে সারাদেশে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। আর এই নির্দেশনা অনুযায়ীই মঙ্গলবার থেকে সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে বাড়তি নজরদারি চালানো হচ্ছে।
নিরাপত্তা হুমকি নেই
একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দেশের জনগণ এ মামলার রায়ের জন্য অধীর আগ্রহে রয়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে জাতি একটি কলঙ্ক থেকে মুক্ত হবে। ওই নৃশংস গ্রেনেড হামলার বিচার মানুষ দেখতে চায়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে দেশে কোনো বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা নেই।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, এই রায়কে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের নিরাপত্তা হুমকি নেই। রায়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা বিঘ্ন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা মহামান্য আদালতের একটা স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ।
তিনি বলেন, রায়কে ঘিরে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে। রায়কে কেন্দ্র করে কোন স্বার্থান্বেষী মহল সহিংসতার চেষ্টা করলে তাদেরকে কঠোরহাতে দমন করা হবে, কোনো ধরনের অপতৎপরতা বরদাস্ত করা হবে না। নগরবাসীর জান-মালের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।