চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রায়ের পর জিহাদের বাবার ‘নিরাপত্তা শঙ্কা’

বহুল আলোচিত শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় রায় প্রকাশের পর নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিশুটির বাবা নাসির ফকির। তার দাবি, রায়ে খালাস পাওয়া দুই অাসামী সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) দীপক কুমার ভৌমিক এবং সহকারী প্রকৌশলী-২ মো. সাইফুল ইসলাম তার কাছে থেকে ‘‘ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্পে’’ সই নিয়েছেন। যা দিয়ে তার ক্ষতি করতে পারে।

রোববার  জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার রায়ে চার জনের ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন অাদালত। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দুই আসামীকে খালাস দেন আদালত।

রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া চ্যানেল আই অনলাইনকে নাসির ফকির বলেন, ‘মামলায় ছয় আসামীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ। অথচ সাজা হলো চার জনের। তাহলে বাকি দুইজন খালাস পায় কী করে? এ রায়ে আমি অসন্তুষ্ট। আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে আমি উচ্চ আদালতে যাবো।’

এলাকার কাউন্সিলরের মাধ্যমে তার কাছ থেকে খালাস পাওয়া দুই আসামী ৩০০ টাকা মূল্যের ‘‘ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্পে’’ সই নিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, “আমার কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নেওয়া হয়েছে। আমি জানি ওই স্ট্যাম্প এখন খালাস হওয়া দুই আসামীর কাছে আছে। এখন তারাতো চাইলে যা খুশি তাই লিখে দিয়ে আমার যেকোন ধরনের ক্ষতি করতে পারে।’’

“ওই ছয় আসামী ছাড়া আমার আর কোন শত্রু নাই। আমার কোন ধরনের ক্ষতি হলে তারাই দায়ী থাকবেন”।

আসামীপক্ষের প্রতিক্রিয়া:
রায়ের পর নিজেদের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন আসামীপক্ষও। মামলার ১ নম্বর আসামীর আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা মর্মাহত। যে অপরাধ তাতে এত বড় সাজা অপ্রত্যাশিত। আমরা উচ্চ আদালতে যাবো।”

রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিক্রিয়া:
মামলাটির পাবলিক প্রসিউকিউটর মনে করেন আদালতের এ রায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এ রায়ের মাধ্যমে এই দৃষ্টান্তই স্থাপিত হলো যে, যত বড় কর্তাই হোক না কেন, দায়িত্বে অবহেলা করলে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। দায়িত্বে অবহেলা করলে যথাযথ শাস্তি তাকে পেতেই হবে।’

রায় ঘোষণার সময় যেমন ছিলেন আসামীরা:
বেলা ১২টার দিকে এজলাসে বসে রায় পড়া শুরু করেন বিচারক মো: আকতারুজ্জামান। প্রায় পৌনে একঘণ্টার রায়ের নিজের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, আদালত মনে করে আসামীদের দায়িত্বে চরম অবহেলার কারণেই প্রাণ দিতে হয়েছে চার বছরের শিশু জিহাদকে।

রায় শুনে আসামীদের বিমর্ষ অবস্থায় দেখা যায়। কেউ কেউ মাথায় হাত দিয়ে মুখ নিচু করে থাকেন আদালতের কাঠগড়ায়।

এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন— রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসআর হাউজের মালিক মো. শফিকুল ইসলাম ওরফে আবদুস সালাম, কমলাপুর রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জাফর আহমেদ শাকি।

ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) দীপক কুমার ভৌমিক এবং সহকারী প্রকৌশলী-২ মো. সাইফুল ইসলাম।

২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকেলে রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে বাসার পাশে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে পানির পাম্পের কয়েকশ ফুট গভীর পাইপের মধ্যে পড়ে যায় জিহাদ। ফায়ার সার্ভিসের দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টার চেষ্টায়ও তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরেরদিন একদল উদ্যমী তরুণের চেষ্টায় জিহাদকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।