চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘রাষ্ট্র বলে দিক মেয়েরা রাস্তায় নিরাপদ কি নিরাপদ নয়’

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলার মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কুড়িল থেকে একটি গারো মেয়েকে মাইক্রোবাসে তুলে পালাক্রমে ধর্ষণ করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা।

একের পর এক এরকম নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় নারী নেত্রীরাসহ নারীসমাজ উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, রাষ্ট্র মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে পারবে কি না তা স্পষ্ট করে বলে দিক।

উন্নয়ন কর্মী এবং বেসরকারি সংগঠন ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশী কবির চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, নারীদের উপর ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার বিচার না হওয়ায় এধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

‘বর্তমানে স্কুল-কলেজেও নারীরা নিরাপদ নয়,’ দাবি করে তিনি বলেন, এর প্রধান কারণ হলো দেশে আইন রয়েছে; কিন্তু আইন প্রয়োগ করার ক্ষমতা নেই কারো। এর আগে অনেক ঘটনায় ধর্ষণকারীরা ধরা পড়লেও পুলিশি সাহায্যে তারা বের হয়ে এসেছে বলে অভিযোগ তার। 

মানবাধিকার কমিশন নীরব থাকার অভিযোগ
নারী সংগঠন এবং অন্যান্য সংগঠনগুলো সোচ্চার হলেও মানবাধিকার কমিশন নীরব বলে যে অভিযোগ, সে বিষয়ে খুশী কবির বলেন: আমাদের দেশের মানবাধিকার কমিশনারের চেয়ার হালকা। এই ধরনের ঘটনায় তাদেরই খুব বেশি সোচ্চার থাকার কথা ছিলো। কিন্তু আমরা দেখলাম নীরব ভূমিকা পালন করছে মানবাধিকার কমিশন।

এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানের বক্তব্য জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, সরকারি কাজে তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। আগামী ৬ জুন তার দেশে ফেরার কথা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কমিশনের চিঠি
তবে কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, তারা দু:খজনক ওই ঘটনায় উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে আরো উদ্যোগী হওয়ার জন্য তারা সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি চিঠি পাঠাবেন।

‘রাষ্ট্র এ ধরণের ঘটনার দায় এড়াতে পারে না,’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।

এরকম ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সব রাস্তাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার সুপারিশও করেন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

কর্মজীবী নারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতংক
রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণের ঘটনায় রাজধানীর কর্মজীবী নারীসহ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।

এর আগে এরকম কিছু ঘটনার পর অভিযুক্ত একজন হাতিরঝিলে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। তবে সামগ্রিক বিচারহীনতার অভিযোগ অনেক নারীর।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া থোয়াই থোয়াই লাহ মারমা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, গারো মেয়েটির কি দোষ ছিলো! রাস্তায় চলাচল করার স্বাধীনতা কি তার নেই! কর্মস্থল থেকে তো সে বাসায় ফিরছিলো।

‘রাষ্ট্র যদি নারীদের রাস্তায় চলাচলের নিরাপত্তা দিতে না পারে, তাহলে রাষ্ট্র বলে দিক যে মেয়েরা বাইরে নিরাপদ নয়,’ এভাবেই তার ক্ষোভের কথা জানান লাহ মারমা।

তিনি বলেন, গারো মেয়েটিকে যারা অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে তাদের অবিলম্বে ধরা হোক। তা না হলে নারী লাঞ্ছনায় বিরুদ্ধে তরুণ সমাজ আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে মনে করেন ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার এই শিক্ষার্থী।

সামাজিক সচেতনতার আহবান
নারী ও শিশু নির্যাতন দমনে আলাদা কমিটি করে মানবাধিকার কমিশন নানামুখি পদক্ষেপ নিচ্ছে জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, সমাজের সকলকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

নারী নেত্রী খুশী কবিরও মনে করেন, সমাজের প্রত্যক মানুষকে নারীদের লাঞ্ছনার প্রতিবাদে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ এটি শুধু নারীর সমস্যা নয়; এটি পুরো সমাজ ও জাতির সমস্যা।