যদি আজ বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা যেত তবে আজই ইতিহাস গড়া হতো। যদি আগামীকাল উড়ে যায় তবে আগামীকাল ইতিহাস লেখা হবে। আজ উৎক্ষেপণ হয় নি, কিন্তু সে জন্য কথার ঝড় থেমে থাকে নি।
অনেকের আপত্তি হল, আবারও ইতিহাসের সাথে বঙ্গবন্ধুর নাম জড়িয়ে গেল কেন। অনেকের মত আমিও উপগ্রহ উৎক্ষেপণ দেখার জন্য বসে ছিলাম অনলাইনে। অবাঙালিদের ধারাভাষ্যকারের মুখে বারবার বঙ্গবন্ধু উচ্চারণে আমার মনটা ভরে গেছে। একটুও খারাপ লাগে নি।
বাংলার বন্ধু এই কথার মানেই হলো ‘বঙ্গবন্ধু’। যিনি এই উপাধি পেয়েছেন তাঁর নাম শেখ মুজিবুর রহমান। অতীতে শের এ বাংলা, দেশবন্ধু, বঙ্গবীর এমনি অনেক নাম দেওয়া হয়েছে বাংলার বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের।
যদি উপগ্রহটির নাম ‘শেখ মুজিবুর’ রাখা হতো তা হলেও বোধহয় কথা উঠত। যদি ‘কবিগুরু’ রাখা হতো তাহলে বলা হতো ‘বিদ্রোহী’ নয় কেন। যদি ‘পদ্মা’ রাখা হতো তবে বলা হতো ‘আড়িয়াল খা’ নয় কেন। যদি ‘কাঁঠাল’ রাখা হতো তবে বলা হত ‘তেঁতুল’ নয় কেন।
উপগ্রহের নাম সাধারণত কাজের ধরন কিংবা এর উদ্দেশ্যের সাথে মিল রেখে করা হয়। যোগাযোগ সংক্রান্ত, রসায়ন সংক্রান্ত পদার্থ বিজ্ঞান সংক্রান্ত ইত্যাদি বিষয়ভিত্তিক নামই সচরাচর শোনা যায়। তবে বিভিন্ন ব্যক্তির নামেও বিভিন্ন উপগ্রহের নামকরণ করা হয়েছে। একশো’র উপরে উপগ্রহ আছে যেগুলো পাদ্রী, নবী, বিজ্ঞানী লেখকসহ নানা পেশার ব্যক্তিদের নামের সাথে মিল রেখে ঠিক করা হয়েছে। তাদের একটি নামও বাংলায় উচ্চারিত নাম না।
‘বঙ্গবন্ধু’ যদি বাংলা শব্দ হয় তবুও কি বাঙালিদের সেটা নিয়ে কথা তুলতে হবে। ব্যাপারটা এখানেই পরিষ্কার হয়ে যায়। এই উপাধির সাথে যে একজন ব্যক্তির নাম জড়িত। তাঁকে বিশ্বের অনেকগুলো দেশের লোক, অনেক মতবাদের লোক, অনেক গোষ্ঠীর লোকেরা পছন্দ করে না। শুধু অপছন্দই নয়, তাঁকে সহ্য করতে পারে না।
তাই বাংলাদেশের কিছু অনলাইন এক্টিভিস্টকে দেখলাম ঝাঁপিয়ে পড়তে। তাদের অভিযোগ, একটি উপগ্রহের নাম কেন ‘বঙ্গবন্ধু’ রাখা হলো?
কয়েক মাস আগের একটি ঘটনায় ফিরে যাই। আমরা দেখেছি লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর ছবির উপর জুতা পেটা করা হয়েছিল। তখন এই অনলাইন এক্টিভিস্টরা কিন্তু কিছু বলেনি। বাংলাদেশে এক সময় বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ নিষেধ ছিল। বঙ্গবন্ধুর ছবি টানানো যেত না কোথাও। সেটাও আইন করে নিষেধ করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলেও আইন করা হয়েছিল যেন সেই হত্যার বিচার চেয়ে কেউ আদালতে আবেদন করতে না পারে।অর্থাৎ সেই ৬৮-৬৯ সাল থেকে তাঁর নাম নিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে এই চক্র।
আজ ২০১৮ সালের ১০ মে তারিখে তাদের মুখ আবারও দেখলাম। এদের কথা হল, কে এই বঙ্গবন্ধু, কেন তিনি বারবার জেগে ওঠেন। এত শক্তি সে কোথা থেকে পান। অথবা যুগের পর যুগ এতো শক্তি তিনি কিভাবে বিলিয়ে যাচ্ছেন?
তাই বঙ্গবন্ধুর নাম উঠলেই এক বিশেষ শ্রেণির লোক জেগে ওঠে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রথম উপগ্রহের নাম কেন বঙ্গবন্ধু করা হলো তাঁর সূত্র তো বিজ্ঞানী নিউটন সাহেব বহু আগেই দিয়ে গেছেন। টানেরও উল্টো টান আছে। তুমি যত পেছনে টানবে তিনি ততো যাবেন আগে আগে।
একথা সত্য যে বাংলাদেশে এখন বঙ্গবন্ধুর নামের ঢালাও ব্যবহার করা হচ্ছে। আমিও চাই না বঙ্গবন্ধুর নাম যত্রতত্র ব্যবহার করা হোক। দেখলাম ট্রাকের উপর লেখা ‘বঙ্গবন্ধু পরিবহন’। যেখানে সেখানে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানের নাম হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নামে। এসব বন্ধ হওয়া উচিৎ। এমনকি সভা সমিতি যাত্রার প্যান্ডেলেও বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যাবহার করা হয় যেগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হওয়া উচিৎ।
তাই বলে শিক্ষিত লেখাপড়া জানা লোক কেন দেশ ও জাতির ইতিহাসের প্রথম উপগ্রহের নাম বঙ্গবন্ধুর নামে করার জন্য কলম নিয়ে বসে গেলেন? তারা কি বুঝলেন না, এই নাম বিশ্বের নথিতে জায়গা হয়ে থাকবে। রাম শ্যাম যদু মধু হলে কোনো দোষ নেই, শুধু মেঘের গায়ে যেন না লেখা থাকে ‘বঙ্গবন্ধু’। নিন্দুক-সামলোচকদের আপত্তি এটাই এবং বিরোধিতার কারণ বোধহয় সেজন্যই!
আমি অনেক দিন বেঁচে থাকতে চাই। দেখতে চাই আর একটা বঙ্গবন্ধুর জন্ম। তবে কথা দিচ্ছি কোন পীর ফকির ঠাকুরকে বঙ্গবন্ধুর সাথে মিলিয়ে ফেলতে পারবো না। বিশেষ করে যেখানে বাংলাদেশের নাম ও ইজ্জত জড়িত।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)