দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত ভারতের তথাকথিত ধর্মগুরু ডেরা সাচ্চা সৌদা’র প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
হরিয়ানার রোহতাক কারাগারের ভেতরে গঠিত সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন – সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত রাম রহিমের বিরুদ্ধে এ রায় ঘোষণা করেন।
সিবিআই ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছে, তারা আরও কঠোর সাজা হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের জন্য আবেদন করবেন। তাদের ভাষায়, ডেরা প্রধান তার আশ্রমের গোপন চেম্বারে এ পর্যন্ত ৪০ থেকে ৫০ নারী ভক্তকে ধর্ষণ করেছেন। কিন্তু মাত্র দু’জন শেষ পর্যন্ত তা প্রকাশ করার সাহস পেয়েছেন। তাই এ অপরাধের জন্য রাম রহিম সিং আরও কঠোর শাস্তি প্রাপ্য।
আসামীপক্ষের আইনজীবীরা রাম রহিমের সেবামূলক কর্মকাণ্ডের দিকে তাকিয়ে দণ্ড কমিয়ে আনার আবেদন করলেও সিবিআই বিশেষ আদালত সেই আবেদন নাকচ করে দেন। সাজা শোনানোর পর রাম রহিম আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েন বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়া টুডে। এমনকি তিনি আদালত সরাসরি ক্ষমা চান এবং ক্ষমা না করলে আদালত কক্ষ ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান। তাকে আদালত থেকে টেনে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় বলে ইন্ডিয়া টুডে ও এনডিটিভি জানিয়েছে।
রাম রহিমের রায় ঘোষণার জন্য সরকারি হেলিকপ্টারে করে স্থানীয় সময় দুপুরে হরিয়ানার রোহতাকে আনা হয় বিচারক জগদীপ সিংকে। ঝুঁকি এড়াতে জেলগেটেই বসানো হয়েছে অস্থায়ী আদালত।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও দিল্লিসহ গোটা ভারতে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। তবে রায় ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।
রাম রহিম সিংয়ের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে হরিয়ানার পঞ্চকুলা, চন্ডিগড় ও মোহালিসহ অন্যান্য রাজ্যগুলোতে। সহিংসতা রুখতে গুরমিত সিংয়ের ১০৩টি ডেরা থেকে তার ভক্তদের সরিয়ে দেয়া হয়।
সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় তিন স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রয়েছে রাজ্যগুলোতে। রোহতাকে ৯ হাজার পুলিশ ও আধসামরিক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। রাম রহিমের অনুসারীরা বিশৃংখলা সৃষ্টি করলে ওপেন ফায়ারের নিদের্শ দিয়েছেন রোহতাকের ডেপুটি কমিশনার। বিশেষ আদালত রোহতাকের কারাগারের আশপাশে নেয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
শুক্রবার সিবিআই আদালত রাম রহিমকে দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করায় হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও দিল্লির বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বিক্ষোভ করে তার ভক্তরা। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তথাকথিত ধর্মগুরুর ভক্তদের সংঘর্ষে ৩৮ জন নিহত এবং আড়াইশ’র বেশি অনুসারী আহত হয়।