স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল আউয়াল মিন্টু।
মঙ্গলবার এক শোক বাণীতে আউয়াল মিন্টু বলেন, দেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, লেখক, শিক্ষক ও সাংবাদিক রাবেয়া খাতুনের মৃত্যুতে মরহুমার শোকাহত পরিবার ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গের মতো আমিও গভীরভাবে সমব্যাথী। রাবেয়া খাতুন লিখেছেন উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, কিশোর উপন্যাস, স্মৃতিকথা। তার লেখা থেকে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র ও নাটক। পঞ্চাশের দশকে এই অঞ্চলের মুসলিম নারীদের জীবন যখন নানা বিধিনিষেধের বেড়াজালে বন্দি, সে সময়ে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন একজন লেখক হিসেবে।
যোগ করেন: অর্ধ শতাধিক উপন্যাসের রচয়িতা রাবেয়া খাতুন শিক্ষকতা করতেন, সাংবাদিকতাও করেছেন। ‘ইত্তেফাক’, ‘সিনেমা’ পত্রিকা ছাড়াও তাঁর সম্পাদনায় পঞ্চাশের দশকে প্রকাশিত হতো ‘অঙ্গনা’ নামে নারীদের একটি মাসিক পত্রিকা। তিনি বাংলা একাডেমির পর্ষদ সদস্য ছিলেন। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ১৯৯৩ সালে একুশে পদক এবং ২০১৭ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। খ্যাতিমান কথাশিল্পী হিসেবে মরহুমা রাবেয়া খাতুন আমাদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে ছিলেন এক উজ্জ্বল তারকা। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জগতের নানা শাখায় তিনি রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তার মৃত্যুতে দেশ একজন বরেণ্য সাহিত্যিক ও গুণী ব্যক্তিকে হারালো যা অপূরণীয়।
আবদুল আউয়াল মিন্টু তার শোক বার্তায় আরও বলেন: বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, ঢাকা লেডিজ ক্লাব, বিজনেস ও প্রফেশনাল উইমেন্স ক্লাব, বাংলাদেশ লেখক শিবির, বাংলাদেশ কথা শিল্পী সংসদ ও মহিলা সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। মরহুমা রাবেয়া খাতুনের বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিগণ, গুণগ্রাহী, শুভানুধ্যায়ী ও ভক্তদের প্রতি গভীর সহমর্মিতা ও সমবেদনা জানাচ্ছি।
ছিয়াশি বছরে মারা যাওয়া রাবেয়া খাতুন সাহিত্যের সকল শাখায় সফলভাবে বিচরণ করেছেন। দীর্ঘ জীবনে তিনি বাংলা সাহিত্যকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন তেমনি ভূষিত হয়েছেন অসংখ্য পুরস্কারেও।
বাংলা সাহিত্যে উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম রাবেয়া খাতুন। ১৯৩৫ সালে বিক্রমপুরে জন্ম তার। লেখালেখির পাশাপাশি শিক্ষকতা এবং সাংবাদিকতাও করেছেন।
উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, কিশোর উপন্যাস, স্মৃতিকথাসহ চলচ্চিত্র ও নাট্য জগতেও বিচরণ রাবেয়া খাতুনের। তার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘মেঘের পরে মেঘ’ জনপ্রিয় একটি চলচ্চিত্র। ‘মধুমতি’ এবং ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ও প্রশংসিত হয়েছে সব মহলে।
তার স্বামী প্রয়াত এটিএম ফজলুল হক ছিলেন দেশের চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রথম পত্রিকা সিনেমার সম্পাদক ও চিত্রপরিচালক। বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’ এর পরিচালকও তিনি।
১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই তাদের বিয়ে হয়। তাদের চার সন্তানের মধ্যেে রয়েছে, ফরিদুর রেজা সাগর, কেকা ফেরদৌসী, ফরহাদুর রেজা প্রবাল ও ফারহানা কাকলী। বাংলা একাডেমি, চলচ্চিত্র জুরি বোর্ড, লেডিস ক্লাব, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, মহিলা সমিতিসহ অসংখ্য সংগঠনের সাথে ছিলেন রাবেয়া খাতুন।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন রোববার বিকালে বাধ্যর্কজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। সোমবার দুপুর ১২টায় সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাবেয়া খাতুনের মরদেহ রাখা হয়। এরপর বিকেল ৩টায় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সবশেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে ।