রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জাজ মাল্টিমিডিয়া পরিচালিত বাণিজ্যিক সিনেমা ‘দহন’ প্রদর্শনীর প্রতিবাদ করায় এক সাংবাদিকসহ প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ছয় নেতাকর্মীকে মারধর করেছে ছাত্রলীগ।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে প্রক্টর, পুলিশ ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে।
ছাত্রলীগের দাবি, প্রক্টরকে থাক্কা দেয়ার জেরে নেতাকর্মীদের সাথে তাদের হাতাহাতি হয়েছে। তবে প্রক্টর দাবি, তাকে কোনো প্রকার ধাক্কা দেয়া হয়নি।
মারধরের শিকাররা হলেন, রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক খোলা কাগজের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আলী ইউনুস হৃদয়, রাবি প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক মহব্বত হোসেন মিলন, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিল হোসেন, প্রচার সম্পাদক মিঠুন চন্দ্র মোহন্ত, ছাত্র ফেডারেশনের প্রচার সম্পাদক ইসরাফিল, কর্মী রাশেদ রিমন, কর্মী আশরাফুল আলম। এদের মধ্যে মিঠুনের হাত ভেঙ্গে গেছে। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) পাঠানো হয়েছে।
অভিযুক্ত মারধরকারীরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবরুন জামিল সুস্ময়, ইমরান খান নাহিদ, মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক ফেরদৌস মাহমুদ শ্রাবণ, কর্মী শেখ সিয়াম, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম রেজাসহ বহিরাগত বেশ কয়েকজন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার বিকেল ৩টায় ‘দহন’ সিনেমাটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনী বন্ধ করার প্রতিবাদে দুপুর ১২টা থেকে রাবি প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা মিলনায়তনের সামনে অবস্থান নেন। প্রদর্শনী শুরুর সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। একপর্যায়ে প্রক্টর দর্শকদের মিলনায়তনে প্রবেশ করতে বললে আন্দোলনকারীরা বাধা দেন।
এসময় প্রক্টরের সামনেই আন্দোলনকারী কয়েকজনের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী সুস্ময়, নাহিদ, ফেরদৌস, শ্রাবণসহ বহিরাগত কয়েকজন। তারা বিক্ষোভকারীদের এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। মারধর আটকাতে গেলে সাংবাদিক ইউনুসের কোমড়ে লাথি দেন সুস্ময়। ঘটনাস্থলে প্রক্টরসহ পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা কেউ এগিয়ে আসেননি।
এ বিষয়ে ছাত্রজোটের সদস্য শাকিলা খাতুন বলেন, ছাত্রলীগের নির্দেশেই এই হামলা করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে প্রক্টর উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও তিনি এগিয়ে আসেননি। এছাড়া তিনি আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। এমনকি মারধরকারীদের ঠেকাতে গেলে তারা এক সাংবাদিককেও মারধর করেন।
জানতে চাইলে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমাদের খবর দিলে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। ওই সময় প্রক্টর দর্শকদের সিনেমা দেখতে যাওয়ার জন্য বললে আন্দোলনকারীরা তার গায়ে হাত তুলেছিলো। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদেরকে আটকাতে গিয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
তবে গায়ে হাত তোলার ব্যাপারটি অস্বীকার করে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, আমি আন্দোলনকারীদের বোঝাতে গিয়েছিলাম। দহন সিনেমাটি একটি সামাজিক ছবি। কিন্তু তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। তারা আমার কথা না শুনে আরও বিশৃঙ্খলা করে। আন্দোলনকারীদের মধ্যে এক মেয়ে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তবে তারা কেউ আমার গায়ে হাত তোলেনি।
রাজশাহীর উপহার সিনেমা হলটি গত ১১ অক্টোবর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জাজ মাল্টিমিডিয়া দহন সিনেমাটি প্রদর্শনীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনটি ভাড়া নেয়।
১ থেকে ৬ ডিসেম্বর সিনেমাটি প্রদর্শিত হবে বলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি তাদের ফেসবুক পেজে প্রচারণা শুরু করে। বিষয়টি জানার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন।