সিলেটের মঞ্চ-দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করলো লিটল থিয়েটার সিলেটের নাটক ‘ভাইবে রাধারমণ’।
বিগত শতাব্দির অনন্য সাধক কবি রাধারমণ দত্ত। ব্যক্তি ও সাধক রাধারমণ দত্তকে উপজীব্য করে নগরীর কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে ২৭ ও ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মঞ্চস্থ হয় গীতনাটকটি।
নাটকটি রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন তানভীর নাহিদ খান এবং পরিকল্পনা ও প্রয়োগে রয়েছেন আব্দুল কাইয়ুম মুকুল।
‘কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো, আমি বুক চিরিয়া’ অথবা ‘ভ্রমর কইয়ো গিয়া, শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে, অঙ্গ যায় জ্বলিয়া রে’। এমন কয়েক হাজার দেহতত্ত্ব, ভক্তিমূলক, অনুরাগ, প্রেম, ভজন, ধামাইল গানের রচয়িতা রাধারমণ দত্ত একজন সাধক কবি, বৈষ্ণব বাউল ও ধামালি নৃত্যের প্রবর্তক।
১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে (১২৪০ বাংলা) সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কেশবপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রাধারমণ দত্ত। পরবর্তী বৈষ্ণব মতাবলম্বন করেন এবং কঠিন সাধণায় মগ্ন হন তিনি। তাঁর দীর্ঘ সাধণার বহিঃপ্রকাশ তার সৃষ্ট গানগুলো। শতাধিক শিষ্য ও হাজারো ভক্ত অনুগ্রাহী রেখে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে (১৩২২ বাংলা) তিনি পরলোকগমন করেন। জগন্নাথপুরের নলুয়ার হাওরের পাশে তাঁর গড়ে তোলা আশ্রমেই তাঁকে বৈষ্ণব রীতি অনুযায়ী চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
লিথিসি’র এ প্রযোজনা সম্পর্কে নাটকটির নির্দেশক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী তানভীর নাহিদ খান বলেন, ‘সঙ্গীত ভিত্তিক মঞ্চ নাটক ভাইবে রাধারমণ একটি কর্মশালা ভিত্তিক প্রযোজনা। সিলেটের এ কৃতি মানুষ রাধারমণ দত্তের জীবন নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের। লিথিসি’র এ প্রযোজনা পরিকল্পনার শুরুতেই আমাদের চিন্তা ছিল সিলেটের লোকজ কোন কিছু নিয়ে কাজ করার। তখনই সাধক কবি রাধারমণ দত্তের জীবন নির্ভর নাটক নির্মাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
কবির বংশধরদের সঙ্গে কথা বলে, তাঁর জন্ম ও সাধণক্ষেত্র ভ্রমণ করে ও গবেষকদের সাথে কথা বলে নাটকের পাণ্ডুলিপিটি তৈরি করি। মানুষ রাধারমণ থেকে সাধক রাধারমণ হয়ে ওঠার কাহিনীই এ নাটকের মূল উপজীব্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘নাটকটির কাজ করতে গিয়ে আমরা ইউরোপীয়ান ধাঁচ বাদ দিয়ে উপমহাদেশীয় ধাঁচ ব্যবহারের চেষ্টা করেছি। আর এর ফলে নাটকটি রস আশ্রিত একটি প্রযোজনা হিসেবে মঞ্চস্থ হবে।’
এ ব্যাপারে নাটকটির পরিকল্পনা ও প্রয়োগের দায়িত্বে থাকা আব্দুল কাইয়ুম মুকুল বলেন, দীর্ঘদিন পর লিথিসি নাটক মঞ্চায়ন করছে। আমাদের লক্ষ্য কেবল নাটক মঞ্চায়ন নয়। বরং নতুন নাট্যকর্মী তৈরিও আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। এজন্য কর্মশালার মাধ্যমে প্রথমে নাট্যকর্মী সংগ্রহ করা হয়েছে।
সর্বশেষ ২০০৪ সালে মঞ্চায়িত হয় লিটল থিয়েটার, সিলেট’র নাটক ‘কবর দিয়ে দাও’। এরপর দীর্ঘ বিরতির পর ‘ভাইবে রাধারমণ’ নিয়ে মঞ্চে আসছে লিটল থিয়েটার, সিলেট।