বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্ত চুক্তি বিষয়ে বিল ভারতের রাজ্যসভায় পাস হয়েছে। সংশোধনী বিলটি রাজ্যসভায় উত্থাপন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এটাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এর মাধ্যমে সীমান্ত নিয়ে সব বাধা ও সংশয় কেটে গেছে। এখন দুই দেশ মিলে দ্রুততার সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে।
স্যার শেরিল রেডক্লিফ ১৯৪৭-এ ভারত-পাকিস্তান ভাগ করতে গিয়ে যে সীমান্ত রেখা টেনেছিলেন সেই হিসেবে এক সময়ের পূর্ব পাকিস্তানই এখন বাংলাদেশ। যার তিন দিকে ভারত। অদ্ভুত সেই সীমানা রেখার কারণেই এই সীমান্ত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম। যার আয়োতন ৪ হাজার ১শ ৫৬ কিলোমিটার। অথচ দীর্ঘ এই সীমান্ত চিহ্নিত নয় এখনও।
১৯৭৪-এ মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিতে সীমান্ত এবং অপদখলীয় জমির হিসাব পরিস্কার উল্লেখ থাকলেও ভারতের পার্লামেন্টে বিলটি পাস না হওয়ায়, তার স্থায়ী সমাধান হয়নি। ঝুলে থাকা সেই সীমান্ত সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতা ব্যর্থ হয়েছে বারবারই। দুই দেশের মধ্যে থাকা ছিটমহলগুলোর মানুষের জীবন যেমন ছিল, রয়ে গেছে তেমনই। এখনও যাদের ডাকা হয় ‘ছিট’ এর মানুষ নামে। তাদের নেই দেশ বা পরিচয়। তারা না বাংলাদেশের নাগরিক, না ভারতের নাগরিক।
১৯৭৪ সালের পর ১৯৯২ সালে তিন বিঘা করিডর ব্যবহার করতে দিয়েছিলো ভারত। সই হয় সীমান্ত প্রটোকলও। তারপর রাজ্যসভায় বিলটি সংশোধনের জন্য উত্থাপিতও হয়। পরে গত বছর বিলটি সংসদীয় কমিটিতে অনুমোদন হয় এবং লোকসভার জন্য উত্থাপিত হয়। কিন্তু ভেটো দেয় বিজেপি।
সর্বশেষ মনমোহন সিংয়ের কংগ্রেস সরকার চেষ্টা করলেও বিরোধী জোট বিজেপি’র বাধায় সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়। এবার নরেন্দ্র মোদির সেই বিজেপিই সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান চাচ্ছে। কিন্তু আবারও ভোটের রাজনীতির ফাঁদে পড়ে যায় সীমান্ত বিলটি।
আসামের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট নষ্ট হতে পারে এমন আশঙ্কায় আসামকে বাদ রেখেই চেষ্টা করা হয় সীমান্ত বিল পাসের। এবার বাধ সাধে কংগ্রেস। তবে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকে মাথায় রেখে মোদি সরকার সোমবার সমঝোতায় বসে কংগ্রেসের সঙ্গে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়ার পরই বিলটি পাসের উদ্যোগ নেয় ভারত।
মঙ্গলবার সকালেই বিলটি অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর তোড়জোড় শুরু হয় রাজ্যসভা হয়ে বিলটি লোকসভায় পাস করার। পরের মাসে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের কথা মাথায় রেখে বিজেপি সরকার এই সেশনেই বিলটি পাস করলো।
সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হলে দুই দেশের মধ্যে থাকা ছিটমহলের মানুষেরা পাবে দেশ-পরিচয়। এর মাধ্যমে ভারত, বাংলাদেশকে ফেরত দেবে ১১১টি ছিটমহল, যার আয়তন ১৭ হাজার ১শ৬০ একর। আর বাংলাদেশ, ভারতকে দেবে ৫১টি ছিট, যার আয়তন ৭ হাজার ১শ ১০ একর।