খুলনা থেকে: বয়স ৩৬ ছুঁইছুঁই। বোলিং করায় নেই ক্লান্তির লেশমাত্র। অবিরাম একই গতিতে ছুটে চলেছেন আব্দুর রাজ্জাক। বিসিএলের শেষ রাউন্ডে সাউথ জোনের বাঁহাতি স্পিনার গড়েলেন আরেকটি অনন্য কীর্তি। ঘরের মাঠে নর্থ জোনের ৫ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৩৩ বার ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েছেন।
কীভাবে বোলিংয়ে এতটা ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন এ বাঁহাতি স্পিনার? রহস্যই বটে! মঙ্গলবার দিনের খেলা শেষে সেই রহস্যের সূত্র জানালেন রাজ্জাক নিজেই। তার মতে, অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর অজেয় মনোভাবের কারণেই এমন ছুটে চলছেন।
শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে দিনের খেলা শেষে সোজা ড্রেসিংরুমে ঢুকলেন। চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে বেরিয়ে এলেন দ্রুতই। আগেই খবর পাঠানো হয়েছিল সংবাদমাধ্যমের সামনে আসার জন্য। এলেন চনমনে মেজাজেই। শুরুতেই এল কীর্তির প্রসঙ্গ। রেকর্ডের কথা কি জানেন? রাজ্জাকের সরল স্বীকারোক্তি, ‘এখন মনে পড়ল। আগেরদিন শুনেছিলাম সমান সমান ছিল। আপনারা বলার পর মনে হল।’
কীভাবে একই গতিতে আগাচ্ছেন, উদ্দীপক হিসেবে মনের মাঝে কী কাজ করে; সেটিই খোলাসা করলেন পরের উত্তরে, ‘জানি না। খুব সম্ভবত আমি এ ধরনেরই মানুষ। কারণ আমি নিজে দেখেছি, যেখানেই খেলি না কেন চেষ্টা করি ভালো খেলে টপে থাকার জন্য। সবসময়ই যে হয় তা না, তবে চেষ্টা করি। হারটা মানতে পারি না। হতে পারে এসব কারণেই আমি মোটিভেটেড হই। প্রত্যেক দিন খেলা শেষে সন্ধ্যায় খারাপ লাগলে তো সমস্যা। তার থেকে ভালো কিছুর চেষ্টা করা ভালো।’
রাজ্জাকের কীর্তির কথা নিশ্চয়ই মাথায় রেখেছিনের সাউথের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। নইলে ২১ ওভারের টানা স্পেল কেন করাবেন! অধিনায়কের আস্থার প্রতিদানও দিয়েছেন রাজ্জাক। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে নামা শফিউল ইসলামকে মিডঅফে জিয়াউর রহমানের ক্যাচ বানিয়ে পাঁচ উইকেটের বৃত্ত পূরণ করেছেন। তার আগে সাজঘরে পাঠান জহুরুল ইসলাম, আরিফুল হক, ধীমান ঘোষ ও তাইজুল ইসলামকে।
রাজ্জাকের ৫ উইকেট শিকারে নর্থ জোন অলআউট হয়েছে ১৮৭ রানে। জবাবে এনামুল হক বিজয় ও ইমরুল কায়েসের দৃঢ়তায় ১ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রান তুলে দিন শেষ করেছেন সাইথ জোন। দুই ব্যাটসম্যানই ফিফটি করে অপরাজিত।
ব্যাটে-বলে দারুণ একটি দিন কাটিয়েছে সাউথ জোন। টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত যে কাজে লেগেছে সেটিও মনে করিয়ে দিলেন রাজ্জাক, ‘দেখলেই বোঝা যায় উইকেটে বোলারদের জন্য সাহায্য ছিল। এ কারণেই বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া। যে উইকেটে ঘাস থাকে, সাধারণত ফিল্ডিংই করা হয়। কারণ ঘাস থাকলে ময়েশ্চার থাকার সুযোগ থাকে। মাটিতে রোদটা ওভাবে পড়ে না। আমি মনে করি বোলাররা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেছে।’
ঘাসের উইকেটে নর্থ জোন ধুঁকলেও চা-বিরতির পর ইনিংস শুরু করে সাউথের বিজয়-ইমরুল ব্যাট চালিয়েছেন সাবলীল ঢংয়েই। রোদের তেজ থাকায় পরে উইকেট ফ্ল্যাট হয়ে উঠেছিল বলেই মত রাজ্জাকের, ‘পরের দিকে ব্যাটিং সহজ হয়েছে। বিশেষ করে পরের দিকে, আমি তখন ৬/৭ ওভার বোলিং করেছি মনে হয়েছে সকালের চেয়ে ভালো। এরকম রোদ পড়লে এরকমই হওয়ার কথা। এখানে মাটি বেশ শক্ত। শক্ত মাটিতে বোলারদেরও খুব বেশি কিছু আশা করা কঠিন।’
শেষ ম্যাচে জয় ছাড়া বিকল্প কিছু ভাবছে না সাউথ জোন, সেটিও বেরিয়ে এল রাজ্জাকের কথায়, ‘প্রথম দিন শেষে অবশ্যই আশাবাদী। যে পরিস্থিতিতেই হোক আমরা চেষ্টা করি জেতার জন্য খেলতে। কখনো হয়, কখনো হয় না। তবে মূল লক্ষ্য থাকে জয়। প্রথমদিন শেষে কিছুটা এগিয়ে আছি আমরা।’