বলিউডে অমিতাভ-রেখা, টালিউডে উত্তম-সুচিত্রা আর ঢালিউডে রাজ্জাক-কবরী। সিনেমায় প্রেমের অপর নাম যেন এই জুটিগুলোই। রোমান্টিক জুটি কখনো নিজে নিজে তৈরি হয় না, বরং দর্শকরাই সেটা তৈরি করেন। দর্শক যে জুটিকে ঠিকঠাকভাবে গ্রহণ করে, তারাই হয়ে উঠে ঐতিহাসিক জুটি। বাংলাদেশের সিনেমা জগতে রাজ্জাকও এমন অনেকের সাথেই জুটি বেঁধেছেন। কিন্তু মানুষের মুখে মুখে ফেরে কেবল কয়েকটি জুটির কথাই।
দীর্ঘ ৫০ বছরের ক্যারিয়ারে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘরে তুলেছেন কিংবদন্তী অভিনেতা রাজ্জাক। অভিনয় করেছেন প্রায় ৬০০ টির মতো সিনেমায়। সিনেমায় কখনো প্রেমিকার সাথে রাগ, কখনো অভিমান, আবার হালকা রোমান্টিকতা সবসময় আবেগে ভাসিয়েছে সাধারণ দর্শকদের। রাজ্জাকের সাথে সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি গড়েছিলেন কবরী। এছাড়া আরো অনেকে অভিনয় করেছেন তার সাথে। দেখে নিন রাজ্জাকের সাথে অভিনয় করা নায়িকাদের তালিকা।
রাজ্জাক-কবরী:
কবরী তার ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সাড়া জাগানো রোমান্টিক ছবিগুলো করেছেন রাজ্জাকের সাথে জুটি বেঁধে। রাজ্জাকের সাথে অভিনয় সম্পর্কে কবরী বলেন, আমরা এমন আবেগ ঢেলে অভিনয় করতাম যে ছবির প্রণয় দৃশ্যগুলো খুবই স্বাভাবিক এবং জীবন্ত হয়ে উঠতো। এমনকি সেসময় তাদের নিয়ে নানান গুজবও তৈরি হয়েছিলো। তাদের অভিনীত উল্লেখ চলচ্চিত্র হলো- রংবাজ, ময়নামতি, স্মৃতিটুকু থাক, আবির্ভাব, নীল আকাশের নিচে, দ্বীপ নেভে নাই, কাচের স্বর্গ, ঢেউয়ের পর ঢেউ, পরিচয়, অধিকার, বেঈমান, অবাক পৃথিবী, সোনালী আকাশ, অনির্বাণ প্রভৃতি সিনেমায়। পরবর্তীতে ‘আমাদের সন্তান’ ছবিতে রাজ্জাক-কবরীকে দেখা গেছে বয়স্ক বাবা-মায়ের ভূমিকায়।
রাজ্জাক-শাবানা:
অবুঝ মন এবং মধু মিলন এই দুটো ছবিতে অভিনয় করার মাধ্যমে রাজ্জাকের জুটি বাঁধেন শাবানা। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি। এই জুটির একের পর এক জনপ্রিয় ছবি পায় দর্শক। রজনীগন্ধা, ছুটির ঘণ্টা সিনেমাতেও একসাথে জুটি বেধে অভিনয় করেন তারা। এছাড়া এতটুকু আশা, মায়ার বাঁধন, ঝড়ের পাখি, দুই পয়সার আলতা, চাপা ডাঙার বউ প্রভৃতি সিনেমাও রয়েছে সেই তালিকায়।
রাজ্জাক-শবনম:
আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন, কপালের কালো টিপ পড়বে চোখে। এই গানটি সবসময় রাজ্জাক আর শবনম অভিনীত সিনেমার এক ভালো উদাহরণ হয়ে থাকবে। ‘নাচের পুতুল’ সিনেমায় তারা একসাথে অভিনয় করেন। এছাড়া আখেরী স্টেশন, প্রীত না জানে রীত, নাচের পুতুল, চোর সিনেমাতেও একসাথে অভিনয় করেন তারা।
রাজ্জাক-ববিতা:
ববিতার সাথে জুটি বেঁধে রাজ্জাকের সবচেযে বেশি জনপ্রিয় সিনেমার নাম ‘লাইলি-মজনু’। এছাড়া অনন্ত প্রেম সিনেমাটিও বেশ আলোচিত হয়েছিলো সেই সময়। সিনেমাটির সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসার কারণ রাজ্জাক-ববিতার গভীর চুম্বনের দৃশ্য। যদিও শেষ অব্দি সেই দৃশ্য ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয় সিনেমাটি।
রাজ্জাক-সুচন্দা:
রাজ্জাকের প্রথম সিনেমা ‘বেহুলা’ দিয়ে পথচলা শুরু হয়েছিলো রাজ্জাক ও সুচন্দা জুটির। এর আগে এক্সট্রা হিসেবেও তিনি বেশ কিছু ছবি করেছিলেন। নায়িকা সুচন্দার ‘কাগজের নৌকা’তেও তিনি অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর বাংলাদেশে ভারতীয় ছবি আসা বন্ধ হয়ে গেলে বাংলা সিনেমার দর্শকরা উত্তম-সুচিত্রা জুটির পর রাজ্জাক-সুচন্দা জুটিকেই সাদরে গ্রহণ করেছিল। সামাজিক-পারিবারিক ছবি থেকে লোক-কথার ছবিতে আলোচিত ছিলো এই জুটি। তারা একসাথে আনোয়ারা, দুই ভাই, সুয়োরানী দুয়োরানী, কুচবরণ কন্যা, মনের মত বউ, সখিনা, জুলেখা, যোগ বিয়োগ, যে আগুনে পুড়ি, সংসার, প্রতিশোধ, জীবন সংগীত, অশ্রু দিয়ে লেখা, জীবন থেকে নেওয়া এসব দর্শকনন্দিত সিনেমায় একসাথে অভিনয় করেন।