রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বেপরোয়া দুই বাসের চাপায় তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনের হাত বিচ্ছিন্নের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের বাসচালককে দুই দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে তাদের হাজির করে শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিন দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আব্দুল্লাহ আল মাসুদ দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দুই চালক হলেন- বিআরটিসি বাসের চালক ওয়াহিদ ও স্বজন পরিবহনের বাসের চালক মো. খোরশেদ। এদের দু’জনকে বুধবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এছাড়াও একই আদালত রাজীব হোসেনের হাত বিচ্ছিন্নের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৯ মে দিন ধার্য করেছেন।
দুই বাসের বেপরোয়া প্রতিযোগিতায় হাত হারানো রাজীবের চিকিৎসার ব্যয়ভার নেবে সরকার। এছাড়া তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে তার জন্য উপযুক্ত চাকরির ব্যবস্থাও করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
আহত কলেজ শিক্ষার্থী রাজীব হোসেনের চিকিৎসার অবস্থা দেখতে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। পরিস্থিতি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেন তিনি।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে রাজীবের উন্নত চিকিৎসার জন্য ৭ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল।
ওই ঘটনায় রাজিব হোসেনকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বুধবার রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন এবং তার কৃত্রিম হাত প্রতিস্থাপন করা হলে তার খরচও দুই বাসমালিক কর্তৃপক্ষকে বহন করতে আদেশ দেন আদালত।
রাজীবের স্বজনরা জানিয়েছেন, তার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন, কোন সহৃদয়বান ব্যক্তিবর্গ সহায়তায় ইচ্ছুক হলে অগ্রণী ব্যাংকের যাত্রাবাড়ি শাখায় মেঝখালা খাদিজা বেগমের অ্যাকাউন্টে পাঠানোর অনুরোধ করা হলো। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বার ০২০০০০২১১৪৮৩২।
তিন ভাইয়ের মধ্যে রাজীব বড়, তার অন্য দুই ভাই মেহেদী হাসান (১৩) ও মো. আবদুল্লাহ (১১)। তারা দুজনেই রাজধানীর তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার ছাত্র। পটুয়াখালীর বাউফলে রাজীবের জন্ম। তার বাবার নাম হেলাল উদ্দিন ও মাতার নাম নাসিমা বেগম। রাজীব ডিগ্রী করার আগে বরিশালের সরকারী ফজলুল হক কলেজ থেকে ইংরেজীতে স্নাতক পাশ করে। রাজধানীর ধোলাইখালে এক কম্পিউটারের দোকানে পড়াশুনার পাশাপাশি খন্ডকালীন কাজ করত রাজীব।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর বাংলামটরের দিক থেকে ফার্মগেটমুখী একটি দ্বিতল বিআরটিসি বাস সার্ক ফোয়ারার কাছে পান্থকুঞ্জের পাশে সিগনালে থেমে ছিলো। সে বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন রাজীব। খানিকবাদেই একই দিক থেকে আসা স্বজন পরিবহন নামের একটি বাস দ্রুতগতিতে এসে দ্বিতল বাসের বাঁ পাশের ফাঁক দিয়ে ঢুকে সামনে যাওয়ার (ওভারটেক) চেষ্টা করে।
দুই গাড়ি তখন টক্কর দিতে গেলে চাপে পড়ে ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ফটকে দাঁড়ানো রাজীবের। হাতটি দ্বিতল বাসের সঙ্গে ঝুলছিলোও তখন। তাৎক্ষণিকভাবে রাজীবকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নেওয়া হলেও হাতটি আর জোড়া দেওয়া যায়নি। মঙ্গলবারই রাজীবের অস্ত্রোপচার করা হয়।