চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘শুধু পর্দায় নয়, বাস্তবেরও হিরো অনন্ত জলিল’

রাজীবের ভাইদের দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিয়েই প্রশংসিত অনন্ত

রাজধানীতে দুই বাসের চাপায় হাত হারানো, পরবর্তীতে প্রাণ হারানো তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনের ছোট দুই ভাইয়ের দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিয়েই সোশাল মাধ্যমে তুমুল প্রশংসিত চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল। অনেকে তাকে ‘বাস্তবের হিরো’ খেতাবও দিয়েছেন! ১৭ এপ্রিল নিজের জন্মদিনে নিহত রাজীবের দুই অসহায় ভাইয়ের পড়ালেখার দায়িত্ব নেয়ার কথা জানিয়ে অনন্ত জলিল তার ভেরিফায়েড পেজে একটি স্ট্যাট্যাস […]

রাজধানীতে দুই বাসের চাপায় হাত হারানো, পরবর্তীতে প্রাণ হারানো তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনের ছোট দুই ভাইয়ের দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিয়েই সোশাল মাধ্যমে তুমুল প্রশংসিত চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল। অনেকে তাকে ‘বাস্তবের হিরো’ খেতাবও দিয়েছেন!

১৭ এপ্রিল নিজের জন্মদিনে নিহত রাজীবের দুই অসহায় ভাইয়ের পড়ালেখার দায়িত্ব নেয়ার কথা জানিয়ে অনন্ত জলিল তার ভেরিফায়েড পেজে একটি স্ট্যাট্যাস দেন। ৫৬ হাজার লাইক পড়ে ওই পোস্টে। এছাড়া সাড়ে ৫ হাজারের বেশি শেয়ার হয় পোস্টটি। দেখা গেছে ৪ হাজারের মতো মন্তব্য।

বিশেষ করে চোখে পড়েছে অনন্ত জলিলকে উদ্দেশ্য করে দেয়া মন্তব্যগুলো। সেখানে রাজীবের অসহায় ছোট দুই ভাইয়ের দায়িত্ব নিতে চেয়ে প্রশংসায় ভাসছেন অনন্ত জলিল। অনন্তর পোস্টের কমেন্টে চোখে পড়েছে প্রশংসার ফুলঝুরি। তাকে সবাই এমন মহৎ উদ্যোগ নেয়ার জন্য সেলুট জানিয়েছেন। কেউ আবার অনন্ত জলিলের দীর্ঘজীবন কামনা করেছেন।

আবদুস সালাম নামে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেছেন, পৃথিবীতে কিছু উত্তম লোক তো আছেই। যদি তথ্যটি সঠিক হয় তাহলে আশা করি অন্য অবস্থা সম্পন্নরাও ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আগ্রহী হবে। কামরুল আলম নামে একজন অনন্ত জলিলকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করেছেন, আপনাকে নিয়ে অনেক সময় অনেকেই ট্রল করেছে। হয়তো আমিও কোনদিন মনের অজান্তে আপনাকে নিয়ে ট্রল করেছি। তার জন্য আমি এবং আমাদের সবাইকে ক্ষমা করবেন আশা করি। আপনাকে যতই দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। আপনার ও আপনার পরিবারের প্রতি অনেক শুভ কামনা রইল।

মুকুল রহমান লিখেছেন, বেশকিছু অনলাইনে আপনার মহৎ উদ্যোগের কথা পড়লাম। আল্লাহ আপনাকে সবসময় এইরকম মহৎ কাজে সাহায্য করুন ও ক্ষমতা দান করুন। আমাদের দেশে অনেক সেলিব্রেটি আছেন বা রাজনীতিবিদ আছেন যাদের এইরকম ভাল, মহৎ কাজ করার ক্ষমতা আছে কিন্তু এইসব কাজ থেকে তারা হাজার মাইল দূরে।

রহমান পিয়াল লিখেছেন, আমি লজ্জিত নিজের কাছে নিজেই। কারণ আপনাকে নিয়ে হয়তো অনেক অকারণে হাসাহাসি করেছি। মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন আপনকে আরও উন্নতি দান করুন। এমন কয়েক হাজার মন্তব্য দেখা গেছে, যেখানে অনন্ত জলিলকে সবাই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানিয়েছেন।

শুধু তাই নয়। সংগীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, এই আরব বংশদ্ভূত অবাঙালী অনন্ত জলিলই দুই বাসের রেষারেষিতে চাপা পড়ে হাত ও পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারানো রাজীব হোসেনের এতিম দুই ভাইয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন। আমাদের মত সুশীল-চেতনার ধ্বজাধারী, টক শোতে বড় বড় কথা বলে দেশ-জাতিকে জ্ঞান দেয়া মানবতাবাদী দেশপ্রেমিক কেউ নয়।

আমাদের জন্য এই চরণ উৎসর্গীকৃত হোক,
মোরা কেবলই হাসি, কেবলই গাই, হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চাই –
না জানি বেদন, না জানি রোদন, না জানি সাধের যাতনা যত …

মঙ্গলবার রাতে অনন্ত জলিল জানিয়েছেন, আজকের দিনে আল্লাহ তায়ালা তার সুন্দর ধরণী আর সুন্দর সুন্দর সৃষ্টির মাঝে আমাকে পাঠিয়েছেন, আজ আমার জন্মদিন, তাই শুকুর আলহামদুলিল্লাহ্। রাব্বুল আলআমিনের নিকট আমি কৃতজ্ঞ, এ কারণে যে এমন আনন্দের দিনে তিনি আমাকে স্বপরিবারে মক্কায় অবস্থান করার সুযোগ করে দিয়েছেন।

জন্মদিনের দিনে তার মন খারাপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু দিন আগে বাস দুর্ঘটনায় রাজীব নামে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী তার হাত হারিয়ে ছিলেন। এবং আজ তিনি পৃথিবী হতে বিদায় নিয়েছেন। যা আমাকে বেশ মর্মাহত করেছে। বাবা-মা হারা এই সন্তান তার ছোট দুই ভাইকে পিতা-মাতার স্নেহ দিয়ে আগলে রেখেছিলো। কিন্তু রাজীবের অকাল বিদায়ে তার দুই ছোট ভাইয়ের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে। তাই আমার জন্মদিনে আমি চাচ্ছি যে পরিবার হারা এই দুই সন্তানের পড়ালেখার দায়িত্ব নিতে।

এদিকে অনন্ত জলিলের এমন আশাবাদের পর রাজীবের মেঝ খালা খাদিজা বেগম লিপি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমাদের আপত্তি নেই। তবে এখন আমরা গ্রামের বাড়ি আছি। রাজীবের দাফন কাজ সম্পন্ন করতে। রাজীবের দুই ভাই আমাদের সঙ্গেই আছে। ঢাকায় ফিরে আমরা কথা বলতে চাই অনন্ত জলিল সাহেবের সঙ্গে। উনার আগ্রহের জন্য উনাকে ধন্যবাদ।’

গত ৩ এপ্রিল বাংলামোটর এলাকায় ওভারটেকিং করতে গিয়ে দুটি বাসের রেষারেষিতে সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীবের ডান হাত বাস দুটির মাঝখানে চাপা পড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সবাইকে কাঁদিয়ে সোমাবার দিবাগত রাতে না ফেরার দেশে চলে গেছেন রাজীব।

২০০৭ সালে রাজীবের বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি তাঁর দুই ভাই আবদুল্লাহ হৃদয় এবং মেহেদী হাসান বাপ্পীর অভিভাবক ছিলেন। রাজীব তাঁর মাকে হারান যখন তাঁর বয়স ছিল আট বছর। ২০১২ সালে এইচএসসি পাস করার পর রাজীব তাঁর ভাইদের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করার জন্যে গ্রাফিকস ডিজাইনিংয়ের কাজ শুরু করেন।

ছবি: সংগৃহিত