কিছু বলার মতো শক্তি যেন হারিয়ে ফেলেছেন সিকান্দার রাজা। বেদনাতুর হয়ে কখনো ফোন, কখনোবা ক্ষুদে বার্তা চালাচালি করছেন অন্য সতীর্থদের সঙ্গে। আইসিসি টেস্ট খেলুড়ে দেশ জিম্বাবুয়ের সদস্য পদ স্থগিত করে দেয়ার পর আর কী করার আছে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না রাজা ও দেশটির অন্য ক্রিকেটাররা!
বোর্ড পরিচালনা ও প্রশাসনে সরকারের হস্তক্ষেপ না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি পূর্ণ সদস্য দেশ জিম্বাবুয়ে। তাই লন্ডনে বার্ষিক সাধারণ সভায় সর্বসম্মতি ক্রমে দেশটির সদস্য পদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত এসেছে আইসিসির পক্ষ থেকে। গত বছর বাছাইপর্ব উতরাতে না পেরে বিশ্বকাপে খেলা হয়নি। সেটি নিয়ে এমনিতেই মনমরা হয়ে আছেন দেশটির ক্রিকেটাররা। এরমধ্যে আইসিসির সদস্য পদ বাতিল যেন মাথায় বাজ পড়ার মতো! ক্রিকইনফোকে রাজা বলছেন, এ আঘাত বিশ্বকাপ খেলতে না পারার মতোই মর্মান্তিক।
নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন অন্ধকারে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা। আগামী সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে ত্রিদেশীয় টি-টুয়েন্টি সিরিজ হয়তো খেলতে পারবেন তারা, কিন্তু কী লাভ তাতে? যদি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টগুলোতে খেলতে না পারা যায়? অক্টোবরে আছে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব। জিম্বাবুয়ের মেয়েদেরও একই টুর্নামেন্টের বাছাই খেলতে হবে। কিন্তু আইসিসি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে, এই টুর্নামেন্টগুলো খেলতে পারবে না জিম্বাবুয়ে।
সব ঠিক করতে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডকে তিন মাসের সময় দিয়েছে আইসিসি। এরমধ্যে বোর্ডের দায়িত্বে নির্বাচিতদের আনতে হবে। তাহলে আগামী অক্টোবরের বোর্ড মিটিংয়ে সদস্য পদের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আলোচনা করবে ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থাটি। রাজা হাতজোড় অনুরোধ করেছেন, আইসিসি আর যাই করুক ক্রিকেটারদের পরিবার আর আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা করে যেন অন্তত খেলা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় তাদের।
যদি আইসিসি অনুমতি না দেয় তাহলে? এখানেই থেমে যাবে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ? শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটা খেলে ফেলেছেন রাজারা? এমন অনেক প্রশ্ন আর আর্থিক অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরেছে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটকে-ক্রিকেটারদের।
‘আমাদের সবার হৃদয় ভেঙে গেছে। সত্যি কথা বলতে, এমন বিদায় আমরা চাইনি। মনে হচ্ছে আমাদের সবার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে। শুধু একজনের নয়, পুরো দেশের। বিষয়টা আমি মানতে পারছি না। আমার বিশ্বাস আমার বাকী সতীর্থদেরও একই অবস্থা। আমরা এই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে বের হবো? কোন পথ আছে?’ রাজার বেদনাহত জিজ্ঞাসা।
‘আমি জানি না আর কোনো পথ খোলা আছে কিনা। আমাদের বলা হয়েছে আমরা নিষিদ্ধ, কিন্তু কত সময়ের জন্য? সাধারণত দুই বছর বসে থাকলেই একজন ক্রিকেটার তার শেষ দেখে ফেলে। আমি জানি না আমাদের সারা জীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হল কিনা। বোর্ডের দোষে আপনি পুরো জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট বন্ধ করে দিতে পারেন না।’
রাজার ভয় ক্রিকেট ছেড়ে হয়তো তাকে এখন বিকল্প পেশা খুঁজে নিতে হবে। পাকিস্তান এয়ারফোর্স কলেজ থেকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শেষে রাজা ক্রিকেটকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে তার বেশ চাহিদা। খেলেন বিভিন্ন টি-টুয়েন্টি লিগে। কিন্তু দেশের হয়ে খেলতে না পারলে কয়জনই বা মনে রাখবে তাকে? কে ডাকবে তাকে?
‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে ভবিষ্যৎ কী জানি না। ক্লাব ক্রিকেট খেলবো নাকি খেলবোই না। তবে কি আমরা আমাদের ক্রিকেট সরঞ্জাম সব পুড়িয়ে ফেলবো? আমি জানি না এখন আমাদের কী করণীয়।’
উল্লেখ্য, গত মাসে জিম্বাবুয়ে সরকার ক্রিকেট বোর্ড বিলুপ্ত ঘোষণা করে একটি মধ্যবর্তী কমিটি করে দেয়। তখন থেকেই আইসিসির আলোচনায় ছিল বিষয়টি। বৃহস্পতিবার লন্ডনের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় জিম্বাবুয়ের সদস্য পদ স্থগিত করার। তার আগে অবশ্য দেশটির সরকার ও বোর্ডের প্রতিনিধিদের বক্তব্য শুনেছে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছে, সব ঠিক না করলে জিম্বাবুয়েকে এখন থেকে আর কোনো তহবিল দেবে না আইসিসি, সংস্থাটির কোনো ইভেন্টেও অংশ নিতে পারবে না জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল।