রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সভাপতিত্ব করবেন। ইতোমধ্যে গ্রাজুয়েটদের বরণ করে নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গ্রাজুয়েটদের সনদ দেয়ার পাশাপাশি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ও লেখক সেলিনা হোসেনকে সম্মাননাসূচক ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে থাকবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ইমেরিটাস আলমগীর মো. সিরাজুদ্দীন। এছাড়াও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
রাষ্ট্রপতি শনিবার বিকেল ৩টার দিকে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করবেন। রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানে যোগ দেয়াকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
নিরাপত্তার জন্য ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস থেকে পাঁচটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো- আজ দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সকল হলসমূহ তালাবদ্ধ থাকবে। এ সময়ে হলে অবস্থানরত কোনো শিক্ষার্থী হল থেকে বের হতে পারবে না এবং বাইরে থাকা কোনো শিক্ষার্থী হলে প্রবেশ করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট এবং বিনোদপুর গেট খোলা থাকবে। কাজলা গেট, চারুকলা গেট স্টেশন গেট বধ্যভূমি গেট বন্ধ থাকবে, তবে সকল গেট দিয়ে সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী গ্রাজুয়েটরা কার্ড দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে রিকশা, অটো রিকশা, মটর সাইকেলসহ সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। বিকালে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গ্রাজুয়েটরা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। সকল শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে আইডি কার্ড বহন করতে হবে। এছাড়াও বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশাধিকারে শিথিল থাকায় ক্যাম্পাসে অভ্যন্তরে চলাচলের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র সাথে রাখার জন্য বলা হয়েছে।
সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন গ্রাজুয়েটদের পদচারণায় মুখরিত মতিহারের সবুজ চত্বর তেমনি এর খুশির আমেজ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে লক্ষ্য করা যায়। পুরাতন আর নতুনের মিলনমেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবের বাতাস বয়ে যাচ্ছে। পরিচিত মুখগুলো অনেক দিন পরে দেখে সবাই গল্পগুজবে মজে আছে তাদের স্মৃতি বিজড়িত জায়গাতে। সমাবর্তনের সাজে সবাই গ্রুপ ছবি, সেলফি নিতে ব্যস্ত। ক্যাম্পাস জুড়ে একই চিত্র।
নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে স্থায়ী ও ভ্রাম্যমান সকল প্রকার দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাজুয়েট, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীসহ গ্রাজুয়েটদের সাথে আসা আত্মীয়-স্বজনদের। এ নিয়ে গ্রাজুয়েটদের মধ্যে থেকে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সমাবর্তনে অংশ নেয়া গ্রাজুয়েট মোশারফ হোসেন বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সকল প্রকার দোকানপাট দু’দিন আগে বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে। ক্যাম্পাসে ঘুরতে গিয়ে খাবার পর্যন্ত কিনে খেতে পারছি না। তাছাড়া সমাবর্তনে আসা অনেকে আত্মীয়-স্বজন নিয়ে এসেছে। ক্যাম্পাসে কোনো দোকানপাট খোলা নাই। কেউ খেতে চাইলেও পারছে না। আবার কোনো কিছু কিনতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর যেতে হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান ফটকে কঠোর নিরাপত্তার জন্য যাওয়া আসাও কষ্ট।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এক শিক্ষার্থী জানান, ‘দশম সমাবর্তন উপলক্ষে যেমন চিন্তা করেছিলাম তা আর হলো না। ভেবেছিলাম সমাবর্তন অনুষ্ঠান দেখতে পারবো। কিন্তু তা দেখা তো পরের কথা দুই দিন আগে থেকেই ক্যাম্পাসে থেকেই ভোগান্তির মধ্যে পড়ে গেছি। ক্যাম্পাসের ভিতরের সব দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কোনো কিছু খেতে হলেও বাইর যেতে হয়।’
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান কথা বলেননি।