বুধবারের পৌর নির্বাচনকে আগামী দিনের রাজনীতির ক্ষেত্রে এক ভিন্ন রকমের প্রভাবক হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তাদের মতে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সরাসরি এই ভোটের লড়াই আগামী দিনের গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। পাশাপাশি ২০০৮ সালের পর এবারই সরাসরি দলীয় প্রতিকে ভোটের মাঠে লড়াইয়ে নেমেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এসব উপাদান দেশের রাজনীতির ট্রেনকে নতুন পথে নিয়ে আসতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আশা করছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়্যারম্যান ডক্টর অরুণ কুমার গোস্বামী বলেন, দলীয় প্রতীকে এবারের পৌর নির্বাচন হচ্ছে। এর আগে হয়তো দলীয় প্রতীকে হতো না কিন্তু দলের প্রভাব নির্বাচনে থাকতোই। তবে এবারের নির্বাচন রাজনীতিতে বিএনপির ফিরে আসার পথ আরো সহজ করে দিচ্ছে।
আরো যে বিষয়টি সামনে আনতে চান এই অধ্যাপক তা হলো, এর আগে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনে গিয়েছিলো বিএনপি। কিন্তু, এবার বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে হয়েছে জামায়াত ছাড়া।
‘সুতরাং জামায়াতের রাজনীতিতে ফিরে আসার সব ধরনের সম্ভাবনাই এখন শেষ। এটা অবশ্যই দেশের জন্য একটি ভালো সিদ্ধান্ত,’ বলে মনে করছেন ড. গোস্বামী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ডক্টর শান্তনু মজুমদার বলেন, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনের পক্ষপাতি আমি নই। তবুও দিন পেরোলেই যে পৌরসভা নির্বাচন সেটাকে আমি রাজনীতির ট্রেনটাকে সঠিক লাইনে ফিরে আসার একটি উপলক্ষ হিসেবেই মনে করছি।
‘এক দল মানুষ যখন নিজেদের রাজনৈতিক দল হিসেবে দাবি করে তখন তাদের অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। সেটাই আমরা গত ৫ জানুয়ারির (২০১৩) নির্বাচনে পাইনি। এমনকি দলীয় প্রতীকে না হওয়া সিটি নির্বাচন থেকেও নিজেদের শেষ মুহূর্তে প্রত্যাহার করে নেয় বিএনপি।
সুতরাং এবারের নির্বাচনকে বিএনপির আবারও মূলধারার রাজনীতিতে ফেরার একটি পদক্ষেপ হিসেবে মনে করছেন এই রাজনীতি বিশ্লেষক।
‘নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক যে অনাস্থা, দায়ী করার প্রবণতা তা নস্যাৎ হবে বলেই মনে করছি। পাশাপাশি সহিংসতার যে রাজনীতি সেখান থেকেও রাজনৈতিক দলগুলো সরে আসছে বলে মনে হয়।’
বুধবার ২৩৪ পৌরসভায় নির্বাচন হলেও সাত জায়গায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে সরাসরি লড়াই হবে ২২৭ জায়গায়। তিনশ আসনের জাতীয় সংসদ ছাড়া আর কখনোই এই দুই প্রতীকের মধ্যে একসঙ্গে এতোবেশি জায়গায় ভোটের লড়াই হয়নি।