বাংলাদেশ যেন ভেজালের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠছে। রাজনীতি, সংস্কৃতি, ধর্ম, সাংবাদিকতা, জনপ্রতিনিধি, খাদ্যদ্রব্য, আমলা, মুক্তিযোদ্ধা, জনসেবা সর্বত্রই ভেজালের দৌরাত্ম। রাজনীতি এখন আর রাজনীতিকদের হাতে নেই। সংস্কৃতি হারাচ্ছে তার নিজস্ব সত্তার স্বাধীনতা। ধর্মে ঢুকে গেছে অধর্মীয় জঙ্গিবাদের বিপথগামী মিথ্যাচার। সাংবাদিকতায় দলাদলি, হলুদ সাংবাদিকতা। জনপ্রতিনিধিরা হয়ে উঠছে জন প্রতারক।
খাদ্যদ্রব্যে মানবদেহের জন্য চরমভাবে ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ। জনকামলা আমলাদের মধ্যে ঢুকে গেছে জন অনিষ্টকর ঘুষ, দূর্নীতি ও দেশদ্রোহী রাজাকারদের অনুচর। মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ঢুকে গেছে ভুঁয়া মুক্তিযোদ্ধা। জনসেবার নামে জনহয়রানি। নিজের স্বার্থের বাইরে কেউ কিছু করতে রাজী নয়। যে-ই সুযোগ পায় সে-ই অনিয়ম দূর্নীতি করতে প্রয়াসী হয়। যশ, খ্যাতির বেলাতেও নিজের ছাড়া অন্যের যশ খ্যাতির স্বীকৃতি দিতে কেউ রাজী নয়। কেউ কুকর্ম করলে চেনা মানুষ যারা আছে সবাই তা বলে বেড়াবে। কিন্তু সুকর্ম করলে তা চেপে যাবে।
কোনো পরিবারে যদি কেউ কবিতা, উপন্যাস তথা সৃজনশীল সাহিত্য চর্চায় নিমগ্ন হয়ে যায় পরিবার অথবা পারিবারিক আত্মীয়রা তা ভালোভাবে নেবে না। যদি না তা করে আর্থিকভাবে লাভবান না হয়। টেন্ডারবাজ অথবা টি, আর, কাবিখা মেরে দেয়া কেউ যদি উঠতি নেতা হয়ে উঠে তা-ও প্রশংসিত হবে। লাগাতার জিতে আসা জুয়ারীর কদর থাকে কিন্তু অভাব অনটনে জর্জরিত মেধাবী কবি কিংবা সুকন্ঠী গায়কের কোন মূল্য থাকেনা তার পারিবারিক ও সামাজিক পারিপার্শ্বিকতায়।
আর্থিক প্রতিষ্ঠাই যেনো হয়ে উঠছে সকল মূল্যায়নের চাবিকাঠি। আমরা এক অধঃপতিত ভেজালযুক্ত পারিপার্শ্বিকতায় বেড়ে উঠছি। ছেলে কোন লাইনে হাঁটে বাবা জানেনা। বাবা জঙ্গিবাদ বিরোধী ছেলে জঙ্গি। আবার আজকের জঙ্গি কাল জঙ্গিবাদ বিরোধী নেতার ঘনিষ্টজন হয়ে উঠছে।
জঙ্গিবাদ বিরোধী মিছিলও এভাবে ভেজালযুক্ত হয়ে উঠছে। সংযম ও পবিত্রতার জন্য সারাদিন রোজা রাখতে হয় ভেজাল খাদ্য খেয়ে, রোজা ভাঙ্গতেও হয় ভেজাল চিনির শরবত খেয়ে। ভেজাল খাদ্যগ্রহণ করে বেড়ে ওঠে ভেজালমুক্ত জীবনযাপন কী করে সম্ভব? ভেজাল দূর করার দায়িত্ব যাদের তাদের মাঝেও ভেজাল। পুলিশ ভেজালকারীকে ধরে আবার টাকা খেয়ে ছেড়ে দেয়। ভেজালের সংবাদ পরিবেশন করবে যে সাংবাদিক সেখানেও ভেজাল। প্রায়ই ভুঁয়া সাংবাদিক গ্রেফতার হতে শুনি। সাংবাদিক নিয়োগ দেয় যে সংবাদ পত্র মালিক সেখানেও ভেজাল। কতিপয় গণ উৎকোচ নিয়ে সাংবাদিকতার কার্ড দিয়ে দেয়। যারা সাংবাদিকতার কার্ড নেয় সেখানেও ভেজাল।
সাংবাদিকতার স জানেনা হয়ে যাচ্ছে সাংবাদিক। কার্ড দেখিয়ে শুরু করে ব্ল্যাকমেইলিং। হয়ত এজন্যই তারা বিনাবেতন ভাতায় সাংবাদিকতা পেশায় আসতে চায়। নাম হবে পেশা আবার বেতন ভাতা নেই এটা কি ধরনের কথা হল।
সুতরাং এ পেশাতেও ভেজাল বিরোধী মোবাইল কোর্ট প্রয়োজন। শিক্ষকরা দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ আদর্শিক প্রজন্ম গড়ে তুলবে। তা না করে তাদের মাঝে অনেককেই দেখা যায় জঙ্গি তৈয়ার করতে। দেখা যায় ছাত্রীর সাথে অনৈতিক ব্যবহার করতে। তাদের বিরুদ্ধে শোনা যায় যৌন হয়রানির অভিযোগ। আইন প্রণেতা সংসদ সদস্যগণ প্রতিনিয়ত আইন ভঙ্গ করছে। টি,আর কাবিখা তথা উন্নয়ন বরাদ্দে ব্যাপক নয়ছয় করছে। তাদের মধ্যে অনেকেই জাতীয় সংসদ সদস্য না হয়ে আত্মীয় ও চাটুকার সংসদ সদস্য হয়ে উঠছে। চলছে উন্নয়ন বরাদ্দের হরিলুট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতি থাকার কারণে অনেক সাংসদকে শিক্ষকদের যোগসাজশে নানা অনিয়ম সংঘটিত করতেও দেখা যায়। আরও শোনা যায় কোচিং বাণিজ্য ও নোট গাইড কোম্পানির সাথে কমিশন বাণিজ্যে লিপ্ত শিক্ষকরা। আরও শোনা যায় ভুঁয়া সার্টিফিকেট দিয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যেতে।
সুতরাং শিক্ষকদের মাঝেও আসল ভুঁয়া চিহ্নিত করনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা দরকার। রাজনৈতিক দলগুলোতে ভেজালের দৌরাত্ম চরমে। বাবা রাজাকার, ছেলে রাজাকার বিরোধী দলের নেতা। জামাত শিবির বিরোধী মিছিলে জামাত শিবিরের লোক। দলের গঠন তন্ত্রের পাতাও উল্টিয়ে দেখেনা কেউ।
এক্ষেত্রে সময়োপযোগী সংশোধন সংযোজন করে হলেও গঠনতান্ত্রিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যেতে পারে। বাইরে চকচকে ভেতরে কাদা এরকম অবস্থার জয়জয়কার চলছে চারদিকে। এরকমটা আর বেশিদিন চলতে দেয়া যায়না। ভেজালের বিরুদ্ধে সর্বস্তরে সোচ্চার ভূমিকায় নামতে হবে।
তবেই বাংলাদেশ সোনার বাংলা হয়ে উঠবে। না হয় মাকাল বাংলাই রয়ে যাবে। তবে যারা ভেজাল বিরোধী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে তাদের মধ্যেও যাতে ভেজাল ঢুকতে না পারে সেব্যাপারেও সতর্ক ভূমিকায় থাকতে হবে।
কথা একটাই সর্বস্তরে মোবাইল কোর্ট,মোবাইল কোর্ট চাই।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)