রাজধানী ঢাকার ৫০ শতাংশ জনগোষ্ঠী করোনাভাইরাসের সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন, বুস্টারের পাশাপাশি মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। ওমিক্রন প্রতিরোধে হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি আগের চেয়ে ভালো বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
ওমিক্রনের ঊর্ধ্বগতি দৃশ্যমান। প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ ও আক্রান্তের হার। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রমণের হার দুই শতাংশ থেকে বেড়ে ১৪ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছে।
রাজধানীর ৫০ শনাক্ত জনগোষ্ঠীর ওমিক্রনে আক্রান্তের বিষয়টি সরকার অনুমোদিত বেশ কয়েকটি বেসরকারি ল্যাবের কোভিড-১৯ টেস্টের পর চিকিৎসকরা চ্যানেল আই অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন।
তারা বলছেন, গত এক সপ্তাহে নতুন ভ্যারিয়েন্টটা বেশ ভালোভাবেই ছড়িয়েছে। মাসখানেক আগেও আমরা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি নাই। ফলে এখন এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট প্রভাব বিস্তার করেছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বেসরকারি এক ল্যাবে ৪৫টি করোনা টেস্ট করানো হয়। সেখানে নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রন্ত হয়েছেন ২৫ জন। অন্যান্য ল্যাবগুলোতেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
বিমানবন্দরে দেশের বাইরে থেকে আগত যাত্রীদের নমুনা করে রিপোর্ট দেওয়া এক বেসরকারি ল্যাবের চিকিৎসক চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন, গত সপ্তাহেও আমরা দেশের বাইরে থেকে আগত যাত্রীদের নতুন ভ্যারিয়েন্ট তিন থেকে চারজন পেতাম। গতকাল তা আট থেকে নয় জনে দাঁড়িয়েছে।
বেসরকারি ওই ল্যাবের চিকিৎসক জানান, ঢাকা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি ল্যাবে বর্তমানে যে টেস্টগুলো হচ্ছে তার অর্ধেকের বেশি নিউ ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন দ্বারা আক্রান্ত। গত সপ্তাহ পর্যন্ত ওমিক্রন শহর কেন্দ্রিক থাকলেও এখন তা বিস্তরভাবে উপ-শহর, শহর, গ্রামে ধাবিত হচ্ছে।
ওমিক্রনের তীব্রতা বাড়ছে
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম)-এর ভাইরোলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ জামালউদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনসহ অন্যান্য যে নিউ ভ্যারিয়েন্টগুলো রয়েছে সেগুলোকে ভ্যাকসিন প্রতিরোধ করতে পারছে না।ওমিক্রন বা নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলোর আক্রান্ত হবার হার ক্রমশঃ বাড়লেও রোগের তীব্রতা কম পরিলক্ষিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে লড়তে ভ্যাকসিন থাকা প্রয়োজন, পাশাপাশি মাস্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই।
বিধিনিষেধ না মানলে লকডাউন: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
দেশের ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। গত বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ কার্যকর হওয়া কথা। তবে নির্দেশনা থাকলেও রাজধানীসহ দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এর বাস্তবায়ন দৃশ্যমান নয়। বিশেষ করে হাট-বাজার থেকে হোটেল-রেস্তোরাঁ, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরিবহনে কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। সাধারণ মানুষ বলছে, প্রচার কম হওয়ায় অনেকেই সরকারের নতুন বিধিনিষেধ সম্পর্কে অবগত নন।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান ১১ দফা বিধিনিষেধ অমান্য করলে লকডাউন দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
শনিবার মানিকগঞ্জে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমার সঙ্গে সারাদেশে চিকিৎসা কর্মকর্তাদের কথা হয়েছে, তারাও প্রস্তুত আছেন। নতুন ঢেউ মোকাবিলায় তাদের আত্মবিশ্বাস রয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় ২০ থেকে ২২ হাজার শয্যা আছে। কিন্তু রোগী যদি ৪০ হাজার বা তার বেশি হয় তা হলে হাসপাতালে জায়গা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে দেশবাসীর সচেতনতা বাড়াতে হবে।