রাজধানীর পশ্চিম ভাষানটেকের মজুমদার মোড়, বাঘেরটেক এবং দেওয়ান পাড়া এলাকায় প্রায় তিনলাখ লোকের বসতিতে নেই পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা। কোন ধরণের স্যুয়ারেজ লাইন না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে এখানে সৃষ্টি হয় তীব্র জলাবদ্ধতা। এর ফলে বৃষ্টির দিনে স্কুলে যেতে পারে না এখানকার শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাসা-বাড়ির ময়লা পানি জমে এসব এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে নিচু জমিতে জন্ম নিচ্ছে নতুন নতুন পুকুর। আর এসব পুকুরে আটকে থাকা পানিতে জন্মাচ্ছে মশা মাছি।
বাঘারটেকের একটি বাসার কেয়ারটেকার জাকির হোসেন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: স্যুয়ারেজের লাইন না থাকায় এক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই অনেক বাসায় পানি উঠে যায়, তলিয়ে যায় এলাকার রাস্তা। তাই বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, অফিসেও যাওয়া যায় না।
‘এছাড়া বাসা-বাড়ির মল-মূত্র মিশ্রিত এসব পানির ফলে নানা অসুখ-বিসুখ ছড়িয়ে পড়ছে। মানবেতর দিন কাটাতে হচ্ছে এখানকার প্রায় তিনলাখ বাসিন্দাকে।’
সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসাকে বারবার জানালেও এই সমস্যার কোন সমাধান হয়নি অভিযোগ করে তিনি বলেন: এলাকাবাসী বারবার সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসাকে জানিয়েছে। কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। কয়েকদিন আগেও লিখিত দরখাস্ত দেয়া হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের লোকজন আসে, আশ্বাস দেয়; কিন্তু কোন কাজ দেখা যায় না।
স্থানীয় বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন: এলাকার বাড়িগুলোর টয়লেট, পানির লাইনের কোন ড্রেন নেই। সবগুলো বাসা থেকে নিজস্ব লাইনের মাধ্যমে ময়লা স্থানীয় নিচু জমিতে লাইন করে দেওয়া হয়েছে। ফলে জমিওয়ালারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
হেনা আক্তার বাঘারটেকে বসবাস করছেন ৫০ বছর ধরে। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, আগে যেসব জমিতে ধান হতো, এখন সেসব এলাকায় যাওয়া যায় না। ময়লা পানি ও মল-মূত্র জমে জমিগুলো এখন নষ্ট পুকুরের মতো হয়ে গেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন: একটু বৃষ্টি হলে পুরো এলাকা ডুবে যায়। চার-পাঁচদিন ধরে সেই পানি শুকায়। তখন বাসা থেকে বের হওয়া যায় না। মানবেতর জীবন যাপন করতে হয় পশ্চিম ভাষানটেক থেকে দেওয়ান পাড়া পর্যন্ত তিন লাখ মানুষের।
‘সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাস্তার জমির জন্য বাড়িওয়ালাদের জমির ছাড়পত্র নিয়ে দিতে। আমরা তিনশ টাকার স্ট্যাম্পে সই করে সেই ছাড়পত্র দিয়েছি। তারা আশ্বাস দিয়েছে। দেখা যাক কী হয়।’
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সালেক মোল্লা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: একনেকে ৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের কথা রয়েছে। এই প্রকল্পের অনুমোদন পেলে এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে রাস্তা নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও স্যুয়ারেজের কাজ করা হবে।