গণপরিবহন, রাস্তাঘাট, ফুটপাত, পাবলিক টয়লেট, পার্কের মতো অবকাঠামোগুলোতে নারীদের ব্যবহার উপযোগিতা সীমিত। আর নগরের কাঠামোগুলো নারীবান্ধব না হওয়ায় শঙ্কা, নিরাপত্তাহীনতা ও সহিংসতার ভয়ে গণপরিসর এড়িয়ে চলতে হয়।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ‘নারী সংবেদনশীল নগর পরিকল্পনা’ বিষয়ে এক গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে। শনিবার অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ তাদের গুলশান কার্যালয়ে ‘বিশ্ব নিরাপদ নগরী দিবস’ উপলক্ষে গবেষণাটি গণমাধ্যমের সমানে তুলে ধরে।
গবেষণার ফলাফল বলছে, ঢাকা শহরের ৫৬ শতাংশ নারী ভালো পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় ঘরের বাইরে যেতে চান না। ২৬ শতাংশ নারী বলেছেন, নিরাপত্তার অভাবে তাদের পরিবার ঘরের বাইরে যেতে দেয় না। ৬১.৫ শতাংশ নারী মনে করেন, ফুটপাতগুলো যথেষ্ট প্রশস্ত নয়। তাই চলাচলে সমস্যা হয়। ৯৩.৫ শতাংশ উত্তরদাতা পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করেন না নিরাপত্তা ও সুবিধার অভাবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৮৭ শতাংশ নারী বলেছেন ঢাকা শহরে নেই পর্যাপ্ত পার্ক ও উদ্যান। যাও আছে সেগুলো নিরাপদ নয় বলে মনে করেন ৪২ শতাংশ নারী।
গবেষণার প্রেক্ষাপট ও মূল বিষয়গুলো তুলে ধরে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, নগরের অর্ধেক জনসংখ্যা নারী হলেও নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়নে নারীর চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় আসে না।
এরপর ‘নারী সংবেদনশীল নগর পরিকল্পনা’ বিষয়ে গবেষণা তুলে ধরেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আক্তার মাহমুদ।
তিনি বলেন, নারীদের চাহিদা নগর পরিকল্পনা প্রতিফলনে দেখা যায় না। একটি নগর পরিকল্পনা যখন নারী বান্ধব হয় না, তখন স্বভাবতই নারীদের জন্য নগর ছোট হয়ে আসে ও অনিরাপদ হয়ে দাঁড়ায়। নিরাপত্তার অভাবে নারীরা তাদের চলাফেরা সীমিত করে ফেলে।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা শহর পুরুষতান্ত্রিক শহর হিসেবেই গড়ে উঠেছে যা মহিলা ও নারীদের অবাধ চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে। এর ফলে নারীরা বাড়ির বাইরে যেতে চায় না কিংবা কর্মক্ষেত্রে পূর্ণ ক্ষমতা প্রয়োগ করে না যা তাদের অধিকার ও দাবি থেকে বঞ্চিত করে, অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতির স্বীকার হয়।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের নির্বাহী বোর্ডের সদস্য ডা. খলিলুর রহমান বলেন, শহরে পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট না থাকায় নারীরা পানি খেতে ভয় পান। কেননা প্রয়োজন হলে তারা টয়লেটে যেতে পারেন না। ফলে ঢাকা শহরের নারীরা নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন।
ঢাকা শহরের রাস্তা, বাস স্ট্যান্ড, ফুটপাত, মার্কেট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বয়সের ২০০ জন নারীর উপর জরিপ করে গবেষণাপত্রটি তৈরি করে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। যেখানে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে আছে, মূলধারার পরিবহন পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনায় নারী সংবেদনশীল নীতি গ্রহণ করা; নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার উপযোগী রাস্তা, ওয়েটিং স্টেশন, টার্মিনাল ও স্টপেজ নির্মাণ করা; পার্ক, উদ্যান ও খেলার মাঠে অবৈধ দখলদারিত্ব প্রতিহত করা।