মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে মতিঝিলগামী বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফরহাদ। ওপারে সিগনালে আটকে আছে মিরপুর-মতিঝিল রুটে চলা কয়েকটি বাস। সেদিকে তাকিয়ে আছেন বিলকিস আক্তার, তার গন্তব্য গুলিস্তান।
সিগনাল ছাড়তেই বাসগুলো যাত্রী তুলতে শুরু করে দিল প্রতিযোগিতা। যাত্রী তুলতে থাকা একটি বাসের সামনের পথটা পুরোটাই আটকে দিল বেশি যাত্রী তুলতে আসা আরেকটি বাস। ফরহাদ মতিঝিলগামী বাসটিতে উঠতে পারলেও বিলকিস দুই বাসের রেষারেষির কারণে গেটের কাছেই যেতে পারলেন না।
এই পরিস্থিতি আপাততঃ কাল্পনিক হলেও রাজধানীর জনপরিবহনে বিশেষ করে বাসে যাতায়াত করা প্রত্যেক নগরবাসীর কাছেই চেনা চিত্র এটি। একই রুটে চলাচল করা বাস কিংবা একই কোম্পানির বাসগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় যাত্রী ভোগান্তি আগামী ১-২ বছরেই দূর হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র।
রাস্তায় নামবে ৪ হাজার নতুন বাস। এজন্য রাজধানীর ১৬৯ টি বাস রুটকে ৬-৭ টি রুটে রূপান্তর করে একটি রুটের জন্য নির্দিষ্ট একটি রঙের বাস চালু করা হবে। এই বাসগুলো পরিচালিত হবে সম্পূর্ণ নতুন ব্যবস্থায়। প্রচলিত ব্যক্তিমালিকানা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে শেয়ার হোল্ডিং কোম্পানির মতো কর্পোরেট বাস কোম্পানি করার চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তবে রাজধানীর গণপরিবহনের প্রধান ভরসা বাসে বিশৃঙ্খলা দূর করাটা ‘পাহাড় সমান দায়িত্ব’ উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘ বাস মালিকরা ৪ শতাংশ হারে বাস কেনার জন্য ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করা, পুরোনো বাসগুলো সরকারের পক্ষ থেকে কিনে নেওয়া, ভাড়া পুনর্র্নিধারণ করা এবং ঢাকায় পাঁচটি বাস ডিপো নির্মাণ করার শর্ত দিয়েছেন। অথচ সাড়ে ৪ শতাংশ সুদের হারে ব্যাংকঋণ আমেরিকা ছাড়া অন্য কোথাও আছে বলে শুনিনি। ৫ হাজার পুরোনো বাস কে কিনবে? ৫টি ডিপোর দাবি জানানো মালিকেরা একটি ডিপোও কি ঠিকমতো রেখেছেন?’
উত্তরের মেয়র গণপরিবহনে আধিপত্য কায়েম করে অসাধুচক্র জনগণকে জিম্মি করে রেখেছে এমন অভিযোগ করে বলেন, ‘সব প্রতিবন্ধকতা বিবেচনায় নিয়ে যা করতে হয় তা করবো। অল্প কিছু মানুষ শত শত কোটি টাকা কামাচ্ছেন। তবে সেটা সঠিক পথে নয়।’
মঙ্গলবার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের একটি অ্যাপ উদ্বোধন করতে এসে এসব কথা জানান উত্তরের মেয়র।
তিনি বলেন, ‘কে কার আগে গিয়ে কত যাত্রী ওঠাবে এই নিয়ে চলে পথরোধ, ওভারটেকিং, দুই বাসের ঠেলাঠেলি। এরকম পরিস্থিতির পরিবর্তন আনা এখন সময়ের দাবি। এজন্য বাসের প্রচলিত মালিকানা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। বাস মালিকরা অনেক শর্ত দিয়েছে। এসব নিয়ে গত দেড়-দুই বছর আলোচনার পর এরকম সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছি। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ঢাকার ১৬৯ টি রুটকে ৬-৭ টি রুটে আনা হবে। এরপর ৬-৭ রঙে ৪ হাজার বাস নামানো হবে। বাসগুলোর মালিকরা শেয়ার হোল্ডিং কোম্পানির মতো নিজ নিজ বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্য লভ্যাংশ পাবে।’
মেয়র আনিসুল বলেন, ‘যদিও এই কাজটি শুধু সিটি কর্পোরেশনের নয়। তবুও গত ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।’