তারা দই ফুচকা খাচ্ছিলেন। খাওয়াটা অস্বাভাবিক কোন ব্যাপার নয়। আবাহনী মাঠের রাগ-রাগিণীর সমুদ্রে রশীদ খানের আলাপের বিস্তার যখন ঘটছে তখন ফুড কোর্টে রসিয়ে খাচ্ছেন ফরাসী ত্রয়ী। ড্যামিয়েন, মায়া ও আন্না। তিনজনই প্যারিসের। সংস্কৃতির রাজধানীর বাসিন্দারা এসেছেন রাগ সঙ্গীতের অঘোষিত রাজধানী ঢাকাতে।
তিন জনের দুজন দ্বিতীয়বারের মত ঢাকাতে। তবে প্রথমবারের মত উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের উচ্চমার্গীয় সার্বজনীন উৎসবে বছর ষাটের ড্যামিয়েন বেশ রসিক। প্রাণখোলা হাসিতে উচ্ছ্বল। খেতে খেতে বলছিলেন, আগে পেট পুজো তারপর সুরের রস নেব। ‘প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হয়, ‘এ উৎসবে আজ কি প্রথম দিন। আর আগে কি শুনেছো এর কথা?’ রসিক ড্যামিয়েন কিছুটা গম্ভীর ঢংয়ে বলেন, নাহে ভ্রাতা, আজ নিয়ে দ্বিতীয় দিন এলাম। মজা কি জানো গতকালও ১০ টার দিকে এসেছি। আজো তাই।’ একটু থেমে ক্রমিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ঢংয়ে ড্যামিয়েন বলেন, প্যারিসে আমার বেশ কিছু বাঙালি বন্ধু আছে। ওরা বলেছিল ডিসেম্বরে যেহেতু ঢাকায় আছ ফেস্টিভালটা দেখতে পার। এখন মনে হচ্ছে এসে খুব একটা ভুল করিনি।’
ইতোমধ্যে খাওয়া দাওয়া শেষ হয়েছে মায়ার। মাঝ বয়সেও বেশ মায়াময় মুখচ্ছবি। ‘তোমার নামে তো বাঙালি ছায়া আছে?’ ছোট্ট কিন্তু মায়াময় উত্তর, ‘ধরে নাও আমি তেমাদের একজন।’ তারপর বলেন, ‘তোমাদের দেশটা আসলে সুন্দর। আর ক্লাসিকাল এই উৎসবে এত মানুষ এমন সঙ্গীত শুনতে আসে দেখে মনে হয় প্যারিস নয় ঢাকাই সংস্কৃতির রাজধানী। তোমাদের জঙ্গীদের কথা শুনেছি কিন্তু এখানে এসে ধারণা পাল্টে গেছে।’
চুপ করে ছিলেন আন্না। তিনিও ফরাসী। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক বেশ পুরনো। তিনি কর্মসূত্রে বাংলাদেশে থাকেন অনেকদিন ধরে। বাংলা বোঝেনও ভালো। বলতেও পারেন টুকটাক। কিন্তু ইংরেজীতেই উত্তর দিতে স্বাচ্ছ্বন্দ্য বোধ করেন। কাজ করেন গ্রামীণ এর শক্তি দই প্রজেক্টে। ‘তুমি তবে টলস্টয়ের উপন্যাস? আন্না কারেনিনা?’ তিনি মুচকি হাসেন আর বলেন, ‘তা আর হলাম কোথায়? আমি কেবলই আন্না।’
আর কিছু বলেননা আন্না। উঠতে শুরু করলে তার সঙ্গে উঠতে থাকেন ড্যামিয়েন আর মায়া। রসনা তৃপ্তি ঘটেছে। এখন রাগের সাগরে ডুবতে হবে তো। রশীদ খানের আলাপ চলছে যে! সে আলাপে কখনও উঠছে কখনও হঠাৎ পতন। কখনও রাগের বিস্তার। আবার বিষাদের অবরোহন। চলছে সে খেয়াল।
ছবি : অনিরুদ্ধ শান্তনু