মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের উপর নিষ্ঠুর সামরিক অভিযান বন্ধে অবিলম্বে জরুরি পদক্ষেপ নিতে নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়েছে।
একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেয়ায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানানো হয়। রোহিঙ্গারা বড় ধরণের মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস।
মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে দ্বিতীয়বারের মতো বুধবার বৈঠকে বসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। সুইডেন ও ব্রিটেনের অনুরোধে বুধবার এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকেই রোহিঙ্গাদের উপর সহিংসতা ও নিপীড়নে অং সান সু চি’র সরকারের সমালোচনা করে আসছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তবে বার বার সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানানো হলেও তা পাত্তাই দেয়নি মিয়ানমার সরকার। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্য ও সুইডেনের আহ্বানে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জরুরি আলোচনায় বসে নিরাপত্তা পরিষদ।
বৈঠকে ১৫ সদস্যের পরিষদের বিবৃতিতে রাখাইনের সহিংসতাপূর্ণ এলাকাগুলোতে পরিস্থিতি উত্তরণের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়। নয় বছরের মধ্যে এই প্রথম মিয়ানমার বিষয়ে সম্মত হয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ এবং এই পদক্ষেপকে সহিংসতা নিরসনের প্রথম ধাপ বলেছে।
বিবৃতিতে শরণার্থীদের সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাগুলোকেও বাংলাদেশকে সহায়তা দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। রাখাইন পরিস্থিতির একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের বিষয়ে একমত হয়েছে পরিষদের সদস্যরা এবং কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টিনিও গুতেরেস। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের অমানবিক নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানান তিনি। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে ওই আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব। এছাড়া রোহিঙ্গাদের পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দিতে সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে আগামী সপ্তাহে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা অং সান সু চি। বুধবার মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র এ তথ্য জানান।
১৯ সেপ্টেম্বরের ভাষণে সু চি জাতীয় ঐক্য ও শান্তির ডাক দেয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব দেবেন বলেও ইঙ্গিত দেন ওই মুখপাত্র।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫শ মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।