মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অস্থির রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতওয়েতে পরপর তিনটি বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে। বিস্ফোরণে একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে। তবে এর পেছনে কারা জড়িত তা এখনো জানা যায়নি বলে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিবিসি জানায়, তিনটি বোমার একটি একজন স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তার বাসার কাছে বিস্ফোরিত হয়। বাকি দু’টো বোমার একটির বিস্ফোরণ হয় স্থানীয় একটি আদালতের কাছে, আর আরেকটি রেকর্ড অফিসের সামনে।
রাখাইনের মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনায় আগে থেকেই সংকটময় অবস্থা রাখাইনে। এর মধ্যে গত মাসে আবার সেখানে একদল বিক্ষোভকারী স্থানীয় একটি সরকারি কার্যালয় দখলের চেষ্টা করার সময় পুলিশের গুলিতে রাখাইনের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ৭ অধিবাসী নিহত হয়।
ওই ঘটনায় স্থানীয় সরকার ও রাখাইনের বৌদ্ধদের মধ্যেও এক ধরনের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। বিক্ষোভকারীদের নিহতের ঘটনায় প্রতিশোধ নেয়ার শপথ করে ঘোষণাও দেয় রাখাইনের একটি নৃ-তাত্ত্বিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তার মাঝেই ঘটল এই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা।
রোহিঙ্গা সংকট
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্তিয়েরস – এমএসএফ) জানিয়েছে, গত ২৫ আগস্ট থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর সময়টার মধ্যে অন্তত ৯ হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তবে একেবারে কাটছাঁট করা হিসেবেও সংখ্যাটি ৬ হাজার ৭শ’র কম নয়, বরং বেশি। নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৭৩০ জন পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। এখন পর্যন্ত হিসেব অনুসারে বাংলাদেশে আগস্ট থেকে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে একে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নিধন কর্মসূচি’ বলে বর্ণনা করেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।