মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সামরিক অভিযান বন্ধে মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেত্রী অং সান সু চি-কে শেষ সুযোগ দিয়েছে জাতিসংঘ। সু চির বর্তমান ভূমিকার কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেছেন, এমনটি চলতে থাকলে মিয়ানমারের পরবর্তি পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হবে।
অবশ্য এর আগে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর সহিংসতা বন্ধে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বারবার আহ্বান সত্ত্বেও পাত্তা দেয়নি মিয়ানমার। এর পরিপ্রেক্ষিতে এবার অং সান সু চিকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
বিবিসির হার্ডটক অনুষ্ঠানে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চির পদক্ষেপ না পাল্টালে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেবে।
ওই অনুষ্ঠানে গুতেরেস বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজেদের বাড়িতে ফেরার অনুমতি দেয়া উচিত। এছাড়া রাখাইনে যা ঘটছে তার জন্য দেশটির সেনাবাহিনী দায়ী বলে জোর দাবি করেছেন তিনি।
রোহিঙ্গারা জাতিগত নিধনের শিকার হচ্ছে বলে এক সপ্তাহ আগে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মন্তব্য করলেও এই ইস্যুতে বলতে গেলে নীরব রয়েছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী সু চি। এমনকি জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও যোগ না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫শ মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।