রাজধানী ঢাকায় অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা নেটওয়ার্ক পরিচালনায় নিয়োজিত রাইড চালক-মালিকদের ‘রাইড শেয়ারিং এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ নিয়ে তালিকাভুক্ত হতে হবে- বিআরটিএ’র এমন ঘোষণার পর খুব একটা সাড়া দেয়নি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
গত ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ‘রাইড শেয়ারিং এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট’ নিতে বলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই বিজ্ঞপ্তি জারির পর এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ‘পাঠাও’ এবং ‘সহজ রাইডস’ বিআরটিএ’র আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে বিআরটিএ’র সঙ্গে প্রাথমিক যোগাযোগ করেছে আরেক রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান ‘ও ভাই’।
রাজধানীতে উবার, পাঠাও, সহজ রাইডস, শেয়ার এ মোটরসাইকেল (স্যাম), বাহন, ট্যাক্সিওয়ালা, মুভ, লেটস গো, আমার রাইড, ইজিয়ার ও ভাইসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মোটরসাইকেল ও গাড়ির রাইড শেয়ারিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘পাঠাও’ বিআরটিএ তালিকাভূক্তির আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করলেও পাঠাও রাইড মালিক-চালকদেরও তালিকাভূক্ত হতে হবে এ বিষয়ে কোন ফোন কল কিংবা এসএমএস পাঠাওয়ের তরফ থেকে পাননি বলে জানান কয়েকজন পাঠাও রাইডার।
পাঠাও বাইক রাইডার জহিরুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, তিনি ২০-২৫ দিন হলো পাঠাও অ্যাপে যাত্রী নিচ্ছেন। বিআরটিএ সার্টিফিকেট নিতে হবে এই তথ্য তিনি সংবাদপত্রে জেনেছেন কিন্তু পাঠাও থেকে তিনি কোন কল বা এসএমএস পাননি।
পাঠাওয়ের আরেক বাইক রাইডার মোহাম্মদ রনি জানালেন একই কথা।
তবে রাইড শেয়ারিংয়ের নামী ব্র্যান্ড ‘উবার’ এসএমএস পাঠিয়ে রাইড মালিক-চালকদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি জানিয়েছে। কিন্তু এখনো তালিকাভুক্ত হতে উবার কোন আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করেনি বলে জানিয়েছে বিআরটিএ। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে আপাতত এই সাড়া পাওয়া সন্তোষজনক বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালকের সহকারী মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: ১৯ এপ্রিল থেকে এক মাসের মধ্যে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান এবং রাইড চালক-মালিকদের বিআরটিএ তালিকাভুক্ত হতে হবে। বিআরটিএ ওয়েবসাইটে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান এবং রাইড মালিক-চালকদের জন্য পৃথক দু’টি ফরম দেয়া আছে।
ইতোমধ্যে ‘পাঠাও’ ও ‘সহজ রাইডস’ ফি সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তালিকাভুক্তির জন্য বিস্তারিত তথ্য জেনেছে ‘ওভাই’। তবে উবার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রক্রিয়া শুরু করেনি।
রাইড মালিক-চালকরা অনলাইনে আবেদন করে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে নিজ নিজ তালিকাভুক্তির সার্টিফিকেট বুঝে নেবেন। রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলো এবং প্রতিষ্ঠানের অ্যাপে যারা রাইড চালায় সমন্বিতভাবে তাদের তালিকাভুক্ত করার ব্যবস্থা করবে।
বিআরটিএ’র দেয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১৯ এপ্রিল থেকে এক মাসের মধ্যে সব রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান এবং রাইড চালক-মালিকদের বিআরটিএ’র তালিকাভুক্ত হতে হবে।
বিআরটিএ তালিকাভুক্ত না হয়ে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠান এবং মোটরযান মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইফতেখার।
তিনি বলেন: যেহেতু বেঁধে দেয়া সময়সীমা মাত্র শুরু হয়েছে তাই আপাতত পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিতে বলা হয়নি। সময়সীমা শেষ হওয়ার পর এই বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলবে বিআরটিএ।
তেজগাঁও-বিজয় সরণী ওভারপাসে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মাহমুদুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: এখন পর্যন্ত রাইড চালকদের বিআরটিএ এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট আছে কিনা যাচাইয়ের কোন নির্দেশনা আসেনি। তাই এখন ছাড় দেয়া হচ্ছে। বিআরটিএ আমাদের ট্রাফিক কন্ট্রোলকে জানানোর পর আমরা ব্যবস্থা নিতে পারবো।
দেশে রাইড শেয়ারিংকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এ বছরের ১৫ জানুয়ারি রাইড শেয়ারিং নীতিমালা-২০১৭ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পায়।
মোবাইল অ্যাপভিত্তিক যাত্রীসেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নীতিমালার আওতায় আনতে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নীতিমালার খসড়া তৈরি শুরু করে বিআরটিএ।
বিআরটিএ-এর এনফোর্সমেন্ট বিভাগের পরিচালককে প্রধান করে একটি কমিটি এই খসড়া নীতিমালা তৈরি করে।