চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘রমজান মাস ও রোজার শিষ্টাচার’

বছর শেষে আবার এলো রহমতের মাস রমজান। ইসলাম ধর্ম মতে, বান্দার সমস্ত পাপ কর্মকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় বলেই এই মাসকে  ‘রমজান’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য মহিমান্বিত ও গৌরবের এই মাসের আদব রক্ষা করা অত্যাবশ্যক।  আদব আরবি শব্দ। এর বাংলা প্রতিশব্দ শিষ্টাচার। মানুষের বাস্তব জীবনের প্রতিটি কাজে শিষ্টাচার জরুরী। ইসলাম ধর্মে শিষ্টাচার হলো, আল্লাহর নির্দেশ পালন ও নিষিদ্ধ বিষয় পরিহার।

রমজানের রোজার সাথে বিশেষ করে সাহরি, ইফতার, কুরআন তিলাওয়াত এসব বিষয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার রয়েছে। আমরা জানি, মহিমান্বিত এ মাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি বিষয় ‘সাহরি’। সাহরির শিষ্টাচার অত্যন্ত চমৎকার। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সা.) এই সাহরির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও কেননা সাহরিতে বরকত রয়েছে’। [সহীহ বুখারি ও মুসলিম: ১৯২৩ ও ২৬০৩]

এবার আরেকটি বিষয় স্পষ্ট না করলেই নয়, সেটি হলো উত্তম সাহরি কী দিয়ে করবেন? জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর একটি হাদিস এখানে প্রমাণস্বরূপ উপস্থাপন করলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের উত্তম সাহরি হলো খেজুর।’ [সুনানে আবু দাউদ, ২৩৪৭]

ইফতারিতেই খেজুর খাওয়া সুন্নাত বিষয়টি এমন নয় কেননা আল্লাহর রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন সাহরিতেও খেজুর রাখতে উৎসাহিত করেছেন।

রমজানের রোজা পালনে সাহরি খাওয়ার বিধান সুন্নাত। সাহরি খেলে রোজা পালনে কষ্ট কম হয়। একটি বিষয় এখানে তুলে ধরা আবশ্যক মনে করছি, সেটি হলো সাহরির উত্তম সময় কখন? এ বিষয়ে কুরআন ও হাদিসের স্পষ্ট সমাধান রয়েছে। সমস্ত সৃষ্টি জগতের প্রতিপালক, রাজাধিরাজ মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, তারা শেষরাতে অর্থাৎ সাহরির সময় ক্ষমা প্রার্থনা করে। [সূরা যারিয়াত, আয়াত:১৮]

এছাড়াও হাদিস থেকে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ (সা.) সবসময় শেষ সময়ে সাহরি খেতেন। এতে যেমন সাহরির আগে তাহাজ্জুদ পড়ার সুযোগ থাকতো তেমনি শেষ সময়ে সাহরি করাতে ফজরের নামাজের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো না। যেকারণে ফজরের নামাজও জামাতে আদায় করা নিশ্চিত হতো। তাই সেহরিতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল (সা.) এর মহা মূল্যবান শিষ্টাচার আমাদের অনুসরণ করা আবশ্যক।

রমজানের এই সময়টাতে উপর্যুক্ত বিষয়ের সাথে আরও কিছু সাধারণ শিষ্টাচার মেনে চললে হয়তো পরকালে অনেক বড় নাজাতের ফয়সালা হয়ে যেতে পারে। যেমন- পরিবারের সব সদস্যদের সাথে সুসম্পর্ক ও সদাচরণের অভ্যাস গড়ে তোলা, আত্নীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখা, প্রতিবেশীর খোঁজ নেয়া, সুদি লেনদেন, মিথ্যা বলে ধোঁকাবাজি, ঘুষসহ সব ধরনের দুর্নীতি, মাদক সেবন, ব্যভিচারের মত গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকা।

হাদিসে উল্লেখ আছে, এমন অনেক রোজাদার ব্যক্তি আছে যারা উপোস থাকা ছাড়া আর কিছু পায় না। আবার অনেক রাতজাগা নামাজ আদায়কারী আছে যারা রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কিছুই লাভ করে না। [সুনানে দারেমী: ২৭২০]

হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কেননা ইসলামে বলা আছে, ‘মানুষের ইমান ভয় ও আশার মাঝে নিহিত’। অর্থাৎ কেউ যদি প্রচণ্ড রকমের ভালো কাজ করে তখন সে আশা প্রকাশ করে আমি জান্নাতে যাবো আবার মুহূর্তের মধ্যে আল্লাহর কোনো বিধানের লংঘন হলে মনে করে আমার থেকে পাপী এই পৃথিবীতে কেউ নেই; জান্নাতে যাওয়া তো দূরের কথা। এটিই বাস্তবধর্মী ইসলামের অপরূপ উপমা।

রমজানে প্রত্যেকটি কাজের ভারসাম্য বজায় রেখে যার যার ক্ষেত্রে অনর্থক কথাবার্তা পরিহার করে চলতে পারলেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব। আল্লাহ আমাদের সবগুলো রোজার সর্বোচ্চ হক আদায় করে রাখার তাওফিক দান করুন। আমীন।