আখিরাতকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘এবং তুমি তোমার দুনিরয়ার হিসসা ভুলে যেও না।’ আসলেই ইসলাম জাগতিকতাকে মোটেও অস্বীকার করে না। তবে আখিরাত ভুলে দুনিয়াতে ডুবে যাওয়া কিংবা আখেরাতের ওপর দুনিয়াকে প্রাধান্য দেওয়া সমর্থন করে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করছেন, ‘বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছ, অথচ আখেরাত উত্তম চিরস্থায়ী।’
মানুষের জাগতিক জীবনে তাই পরিশ্রম করতে হয়। মানুষ যোগ্যতা ও কর্মের ভিন্নতার কারণে তাদের শ্রমের ভিন্নতা তৈরি হয়। কম বেশি সকল মানুষই শ্রমের মধ্যে থাকেন। কেউ ঘরের শ্রমে থাকে কেউ বাহিরের। কেউ অফিসে কাজ করে কেউ মাঠে। কেউ ভারি কাজ করে তো অন্যজন করেন হালকা কাজ। তবে আমাদের সামনে শ্রমিক শ্রেণীর মানুষগুলো প্রায় সকল সেক্টরেই খুব ভারি কষ্টসাধ্য হয়ে থাকে। সে জন্য তাদের প্রতি সকলের বিশেষ করে মালিক পক্ষের দয়াদ্র হওয়ার জন্য ইসলাম তাগিদ প্রদান করেছে।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘শ্রমিকরা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে তোমাদের অধিনস্ত করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা যা আহার করবে, তাদেরকেও তা খেতে দাও এবং যে কাপড় পরিধান করবে তাদেরকেও তা পরতে দাও।’ (বুখারী শরীফ)। শ্রমিকের প্রতি ইসলামের মমত্ববোধ অনস্বীকার্য। মানুষের কষ্ট দেখলে প্রিয় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব কষ্ট অনুভব করতেন। সে কারণেই কখনো কখনো তিনি শ্রমিকের কাঁধের ভারী বোঝা নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিতেন বলে হাদীসে পাওয়া যায়।
শ্রমিকের প্রতি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই মমত্ববোধ পবিত্র মাহে রমজানে বেড়ে নতুন মাত্রা লাভ করতো। ইমাম বায়হাকী ও বাজ্জারের বর্ণিত সমর্থিত বর্ণনায় পাওয়া যায়। রমজান মাস এলেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বন্দিদের মুক্তি দিতেন এবং সকল সাহায্যপ্রার্থীকে দান করতেন।
আসলে একজন রোজাদার সিয়াম পালন করে কতটুকু শ্রম দিতে পারবে তা বিবেচনায় নেওয়া খুবই জরুরি। শ্রমিকের ওপর দুনিয়ার এমন কোনো কাজ চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না যে কাজের ভারে সে রোজা ভাঙ্গতে বাধ্য হয়ে যায়। শ্রমিকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ওই কাজটি যদি সিয়াম পালনকালীন আমাকে করতে দেওয়া হয় তাহলে আমি তা করতে পারব কিনা বিষয়টি এভাবে বিবেচনা করলে মানবতাবোধ জাগ্রত হবে বেশি। তখন শ্রমিকের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ে আমরা আরও বেশি সহনশীল হতে পারব। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা নিজের জন্য তাই পছন্দ করবে যা অন্যের জন্য পছন্দ করো।’ মহান আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: মুফতি আবুল কাশেম ফজলুল হক, উপাধ্যক্ষ, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা, মুহাম্মদপুর, ঢাকা