চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

রমজানে দান-সদকার বিশেষ ফজিলত

‘দানশীলতা’ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই একটি মহৎ গুণ। আর ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে তো কথাই নেই। কুরআন এবং হাদিসে দান-সদকার বহু আকর্ষিক ফজিলত রয়েছে।

হাদিস শরীফে বলা হয়েছে, “দানশীলতা জান্নাতের একটি বৃক্ষ। যা তাকে জান্নাতে পৌঁছে দিবে” (মিশকাত শরীফ)। এই ফজিলত হচ্ছে সাধারণভাবে। রমজানে দান-সদকার জন্য রয়েছে বিশেষ ফজিলত। যা ধর্মপ্রাণ এবং আর্থিক সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য সুখকর সংবাদ।

হাদিস শরীফে দেখা যায়, রমজান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য মাসসমূহের তুলনায় অত্যধিক পরিমাণে দান-সদকা করতেন। আর এই দান-সদকার পরিমাণ এত বেশি ছিল যে, বাতাসের গতিবেগের চেয়েও তা দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হতো! (বুখারী শরীফ : কিতাবুস সাওম)।

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে প্রত্যেক সাহায্যপ্রার্থীকে দান করতেন।  (ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ইমান) হাদিসদ্বয়ে সুস্পষ্ট পরিলক্ষিত হয় যে, রমজান মাসে অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা সুন্নত।  আর এতে অবশ্যই অনন্য ফজিলত রয়েছে।

হাদিসের দর্পণে এসেছে, রমজান মাসে একটি নফল আমল ফরজের মর্যাদায় সিক্ত। এই সূত্র অনুসারে, রমজান মাসে আমাদের প্রতিটি দান-সদকাই ‘ফরজ’ হিসেবে আল্লাহ তায়ালার নিকট গণ্য। দান-সদকার এমন ঈর্ষণীয় ফজিলত অন্যান্য মাসে কখনোই পাওয়া যাবে না। শুধুমাত্র রমজানেই এই ‘অফার’ সীমাবদ্ধ।

আর হাদিস শরীফে, রমজানকে ‘সমবেদনা ও সহানুভূতি’ প্রকাশের মাস হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে।  এটা কেন করা হলো? এ পবিত্র মাসে সমাজের অবহেলিত শ্রেণীর গরিব-দুঃখী, অসহায়-নিঃস্ব পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং যথাসাধ্য সহযোগিতা করার জন্যই। কেননা, সহানুভূতির মাস হিসেবে এই নফল আমল আল্লাহ তায়ালার দরবারে ফরজ হিসেবেই সাব্যস্ত হবে।

ইসলামের মধ্যে উত্তম কাজ কোনটি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “অপরকে খাওয়ানো”। রমজানে আমরা প্রতিবেশীদের সাথে সানন্দে সাহরি-ইফতার ‘শেয়ার’ করতে পারি। এতে সাওয়াব যেমন হবে তেমনি সকলের মাঝে সম্প্রীতি-সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পাবে। আর যারা গরিব, অসহায়-নিঃস্ব তাদেরকে সাধ্যানুযায়ী দান করি।

সামর্থ্য থাকলে, কোনো এক হতদরিদ্র পরিবারের এক মাসের সাহরি ও ইফতারের দায়িত্ব নেই। এতে অঢেল সাওয়াব অর্জনের পাশাপাশি রমজান মাসের পবিত্র ভাব-গাম্ভীর্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে। আমরা ঈদের জন্য নতুন নতুন জামা-কাপড় সংগ্রহ করি। চাইলে এবারের ঈদে প্রতিবেশী কিংবা চেনা-জানা কোনো গরিবকে একটি নতুন জামা উপহার দিতে পারি। ফুটপাতে বসবাসকারী কোনো শিশুর মুখে হাসি ফোটাতে পারি।

রাহমাতুল্লিল আলামীন নবি বলেন, “যে ব্যক্তি কোনো বস্ত্রহীনকে কাপড় পড়াবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে সবুজ রেশমি কাপড় পরিধান করাবেন।  যে ব্যক্তি কোনো ক্ষুধার্তকে আহার করাবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোনো তৃষ্ণার্তকে পানি পান করাবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের পবিত্র শরাব পান করাবেন” (আবু দাউদ)।

মোদ্দাকথা, দান-সদকার মোক্ষম সময় হলো রমজান। এ পবিত্র মাসে বেশি বেশি দান করার মাধ্যমে হাদিস শরীফে বর্ণিত দুর্লভ ফজিলতের ভাগীদার হই। সমাজে সকল শ্রেণী সমভাবে রমজান কাটাতে পারবে আমাদের মুক্তহস্তে দানের মাধ্যমে। চলুন, দান-সদকায় অগ্রগামী হই। হই একজন অসহায় মানুষের চলন্ত সহযোগী।