অনুষ্ঠান শুরুর আগেই ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনের মিলনায়তন লোকে লোকারণ্য। মিলনায়তনের সিঁড়ির আদলে বানানো আসনে পা বিছিয়ে বসেছে দূরদূরান্ত থেকে আগত দর্শক। বাঁশি আর এস্রাজের সুরে সুরে মঞ্চের পর্দা সরে গেল। পর্দা সরতেই দেখা গেল পাঁচ নৃত্যশিল্পী নাচের ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছেন। পেছনে লাল শাড়ি আর সাদা পাঞ্চাবি পরা গায়ক ও বাদকরা।
‘এ দিন আজি কোন ঘরে গো’ গানের তালে তালে নৃত্যের মধ্য দিয়ে শুরু হলো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ১৫৬তম জন্মদিন উপলক্ষে ছায়ানটের রবীন্দ্র মেলা। গতকাল মঙ্গলবার ছিল দ্বিতীয় ও শেষদিন।
এরপর সতপা সাহা এককভাবে গাইলেন, তুমি যে আমার চাও। হেথা যে গান গাইতে আসা গাইলেন সামিয়া আহসান। ফারহিন খান জয়িতা, লাইসা আহমেদ লিসা, আজিজুর রহমান তুহিন, শ্রাবণী মজুমদাররা একের পর এক গান গেয়ে মুগ্ধ করেন দর্শকদের। ততক্ষণে ছায়ানট মিলনায়তনে আর কারও পা বিছিয়ে বসার সুযোগ নেই। কারণ সবাইকে গাদাগাদি করে বসতে হয়েছে। বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়েও ছিলেন অনেকে।
আজিমপুর থেকে আঞ্জুমন আরা এসেছেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের এই ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনে। পেশায় শিক্ষিকা। তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘প্রিয় সব মানুষের গান শুনতে এসেছি। জয়িতা, লিসা, মৃত্তিকা, শ্রাবণী এরা খুব ভালো গায়। ছায়ানটের অন্যান্য শিল্পীরাও চমৎকার গায়। মুগ্ধ হয়ে তাদের গান শুনি। প্রাণ জুড়িয়ে যায়।’
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে দুই দিনব্যাপী উৎসব করায় তিনি ছায়ানটকে ধন্যবাদ জানান।
ওসমান গনী নামে একজন এসেছেন আদাবর থেকে। তিনি বলেন, ‘ ১৪ বছরের ছেলেকে নিয়ে এসেছি। বাচ্চা যদি দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত না হয় তাহলে তাহলে পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই তাকে নিয়ে আসা। রবীন্দ্রনাথ আমাদের সমাজকে সংস্কৃতিকে কত সুন্দরভাবে পথ দেখিয়েছেন সেটা তো প্রজন্মকে চেনানোর দায়িত্ব আমাদের। ছায়ানটের এই আয়োজন খুবই ভালো লেগেছে।’
ছয়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা বলেন, ‘প্রত্যাশাতীত সাড়া পেয়েছি। রবীন্দ্রনাথ যে এখনো বাঙালির হৃদয়ের সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন তা প্রমাণিত হয় এসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে। গতকাল অনেককে বসার জায়গা দিতে পারিনি। আজও দাঁড়িয়ে আছেন অনেকে। আমি মনে করি রবীন্দ্রনাথের আবেদন এভাবেই যুগের পর যুগ বৃদ্ধি পাবে। রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে এই উন্মাদনা বেঁচে থাকবে।’