রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১৮৬১ সালের ৭ মে পশ্চিমবঙ্গের এক জমিদার পরিবারে। বৃহস্পতিবার তার ১৫৪তম জন্মজয়ন্তী। স্বাধীনতার আগে সমাজ-সংস্কৃতির দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা ভারতবর্ষের একজন নিরলস প্রতিবাদকারী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
পরিশ্রমী রবীন্দ্রনাথ সারাবিশ্ব ঘুরে ঘুরে ভারতবর্ষের ঐশ্বর্য যেমন তুলে ধরেছেন। তেমনি এখানকার মানুষ যে যথেষ্ট শক্তিশালী সেই কথা বিভিন্ন জাতির মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। সাহিত্য এবং সঙ্গীত জগতের লোক হলেও বহুমুখী মানুষের সাথে সম্পর্ক ছিল কবিগুরুর। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বিজ্ঞানী সবার সঙ্গেই দারুণ সম্পর্ক ছিল তার।
তিনিই প্রথম অইউরোপিয়ান যিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ঔপনাসিক, নাট্যকার, গীতিকার, শিল্পকলা এবং সঙ্গীত জগতে বিরাট অবদান আছে রবীন্দ্রনাথের।
ভারতের জাতির পিতা মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধীর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক ছিল রবীন্দ্রনাথের। গান্ধীর জাতীয়তাবাদ ধারণাকে ব্যাপক প্রশংসা করেন তিনি। গান্ধীও খুব ভালবাসতেন কবিকে।
রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সঙ্গেও। ১৯৩০ সালে আইনস্টাইনের বাড়ি ‘কাপুথ’তে সাক্ষাত করেন দুই জগতের দুই মহারথী। একই ফ্রেমে বাঁধানো দু’জনের সেই ছবি এখনো কোটি মানুষের হৃদয় কাড়ে।
১৯৩২ সালে রবীন্দ্রনাথ মধ্যপ্রাচ্য সফর করেন। তখন তিনি গিয়েছিলেন ইরান ও ইরাকে। ইরান সফরকে রবীন্দ্রনাথ দেখেছিলেন একটা সুযোগ হিসেবে। এর মাধ্যমে ইরানিয়ান জনগণের সামনে নিজেকে এবং দেশকে তুলে ধরার একটা সুযোগ পেয়েছিলেন। রাজা রেজা শাহ পাহলাভীর আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে ইরান সফর করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
তার ইরান সফরের পর ভারত এবং ইরানের জনগণের মধ্যে একটা শক্তিশালী সম্পর্কের তৈরি হয়। সফরে প্রকৃতির শক্তি নিয়ে তিনি যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেটা নিয়ে ইরানিয়ান গবেষকরা এখনও গবেষণা করেন।
রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক শুধু ব্যক্তির সঙ্গে নয়, তার সম্পর্ক ছাড়িয়ে গেছে দেশ কালে। রবীন্দ্রনাথই একমাত্র যিনি একাই তিনটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত রচনা করেছেন। ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা এই তিন দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা তিনি।
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ছাড়া শ্রীলংকার জাতীয় সঙ্গীতও বাংলায় লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। স্বাধীনতার পর রবীন্দ্রনাথের লেখা তামিল ভাষায় অনুবাদ ও কয়েকটি লাইনের আংশিক পরিবর্তন করে জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেয় শ্রীলংকার সরকার।