বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের(বিসিবি) সঙ্গে মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চুক্তি ছিল ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার ১০ মাস আগেই জাতীয় দলের স্পন্সরশীপ চুক্তি বাতিল করেছে রবি। চুক্তি বাতিলের বিষয়টি গ্রহণ করে নিলেও রবি’র কাছে পুরো টাকা দেয়ার দাবি জানিয়েছে বিসিবি।
সোমবার বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বললেন, ‘আমাদের লিগ্যাল ডিপার্টমেন্ট ও তাদের লিগ্যাল ডিপার্টমেন্ট মিলে বিষয়টি সুরাহা করবে। আমাদের দাবি থাকবে যতদিন পর্যন্ত আমাদের চুক্তি ছিল তার পুরো টাকা প্রাপ্তির। আমরা এখন এই সিদ্ধান্তে অটল আছি। তারপর যদি কোনো দাবি-দাওয়া আসে বা আইনগতভাবে যেটা হয় সেটা দেখা হবে।’
দুই বছর বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে থাকার পর নতুন করে গত বছরের জুলাইয়ে আরও দুই বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় রবি। সব ঠিক থাকলে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ দিয়ে শেষ হতো তাদের চুক্তির মেয়াদ।
কেনো সরে গেল রবি?
রোববার সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রবি জানায়, চুক্তিটি প্রাসঙ্গিকতা হারানোয় সরে গেছে তারা। আসল কারণ অবশ্য কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট বা স্বার্থের দ্বন্দ্ব। বিসিবির চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার অন্য মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে করা চুক্তি নিয়ে আপত্তি ছিল রবি’র।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী দাবি করলেন রবি’র আপত্তির পর ব্যক্তিগত চু্ক্তি থেকে সরে এসেছিলেন ক্রিকেটাররা। সাকিব বাংলালিংকের সঙ্গে ও তামিম গ্রামীনফোনের সঙ্গে চুক্তি বাতিল পর্যন্ত করেছিলেন। গ্রামীনফোনের সঙ্গে মাশরাফীর চুক্তি বাতিলের ব্যাপারটি ছিল প্রক্রিয়ার মধ্যে। সেটি অবগত থাকার পরও রবি’র সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয় বিসিবির কাছে।
নিজামউদ্দিন চৌধুরী বললেন, ‘তারা যে কারণটা বলেছে সেটা হল আমাদের খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগতভাবে যে চুক্তি অন্য অপারেটরদের সঙ্গে, স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকায় রবি’র আপত্তি ছিল; এবং সেটা পুরোপুরিভাবে সুরাহা না হওয়ার কারণেই তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছে। তবে আমাদের ধারণা হল, বিষয়টা তাদের অন্যকোনো স্ট্র্যাটেজিক কারণে হতে পারে। বিষয়টা আমরা পুরোপুরি গ্রহণ করতে রাজী নই। কারণ আমরা এ ব্যাপারে বেশকিছু পদক্ষেপ রবি’র সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নিয়েছিলাম।’
‘আপনারা জানেন যে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে একটি টেলিকম কোম্পানির চুক্তি বাতিল করা হয়েছিল। তামিম ইকবালও করেছিল। ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফীরটা প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল। আমরা এমন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। তারপরও রবির নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে অবাক করার মতো।’ -বলেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী।
তিনি জানালেন, আগামীতে কোনো ক্রিকেটার কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টে জড়াতে পারবে না। বিতর্ক এড়াতে নতুন স্পন্সরের সঙ্গে সেভাবেই চুক্তি হবে। ব্যক্তিগতভাবে কোনো ক্রিকেটার একই ঘরানার কোনো কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে না।
নতুন জার্সিতে বাংলাদেশ
স্পন্সরশীপ চুক্তি বাতিলের বিষয়টি রোববার এক বিবৃতির মাধ্যমে জানায় রবি। ওইদিন অবশ্য বিসিবির পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। সোমবার সকালে এশিয়া কাপের অনুশীলন ক্যাম্পের প্রথমদিন ক্রিকেটাররা আসেন নতুন জার্সি গায়ে। জার্সিতে নেই রবির লোগো। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় রবির সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে বিসিবি। নতুন জার্সি বিসিবি ও কিট পার্টনার ব্র্যাক ব্যাংকের লোগো সম্বলিত।
নতুন স্পন্সরের খোঁজে বিসিবি
নিজামউদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন দুই-একদিনের মধ্যেই স্পন্সর চেয়ে দরপত্র আহ্বান করবে বিসিবি। এশিয়া কাপের আগেই নতুন স্পন্সর পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি, ‘দুই-একদিনের মধ্যেই আমরা সার্কুলারে যাব। শুধু এশিয়া কাপের জন্য হতে পারে কিংবা দীর্ঘমেয়াদেও হতে পারে।’