চার বছর কেন জাতীয় দলের বাইরে রাখা হল? মিরপুর টেস্টে ঘূর্ণিম্যাজিকের পর সেই জবাব চাইতেই পারেন আব্দুর রাজ্জাক। তবে নির্বাচকদের নিশ্চয়ই বিব্রত করতে চাইবেন না ৩৫ পেরিয়ে আসা বিনয়ী এ ক্রিকেটার। রাজসিক প্রত্যাবর্তনে জেগেছে নতুন সম্ভাবনা। উপেক্ষা ভুলে ক্যারিয়ারের ‘দ্বিতীয় ইনিংস’ লম্বা করার মনচ্ছবি নিয়েই হয়ত সামনে তাকাতে চাইবেন বাঁহাতি স্পিনার।
রাজ্জাক না চাইলেও আলোচনাটা চলবে। চার বছর তাকে আড়াল করে রাখা নিয়ে প্রশ্ন চাউর হবে আরও বেশি করে। তবে উপেক্ষার জবাব যা দেয়ার, বল হাতে আপাতত তা দারুণভাবেই দিয়ে ফেলেছেন রাজ্জাক। চ্যানেল আই অনলাইনকে এমনটাই বললেন জাতীয় দলের সাবেক স্পিনার মোহাম্মদ রফিক।
‘ওকে (রাজ্জাক) খেলায়নি তার জবাব মাঠেই দিয়ে দিয়েছে। যারা ম্যানেজমেন্টে আছে তারাই বুঝতে পারবে ওকে কেন এতদিন খেলায়নি, জবাবটা তো মাঠেই দিয়েছে। এখন আর কথা হবে না।’
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিয়মিত উইকেট পেলেও রাজ্জাককে ‘বাতিল’ বলেই গণ্য করে এসেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। সাকিবের ইনজুরিতে অনেকটা বাধ্য হয়েই অভিজ্ঞ এ স্পিনারকে ফেরাতে হল। অন্য কোন বিকল্প থাকলে নির্বাচকরা হয়ত ভুলেই থাকতেন রাজ্জাকের নামটি! মাঠে নেমে রাজ্জাক যা করলেন, তাতে এখন আর ভুলে থাকার সুযোগ নেই!
মিরপুরে নেমে জবাব দিতে সময় নেননি। রাজ্জাক নিজের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই পান সাফল্য। আবার যখন জুটি বেধে প্রতিরোধ শুরু করেছে শ্রীলঙ্কা, আক্রমণে ফিরেই জোড়া আঘাত হানেন। পরে পঞ্চাশ পেরিয়ে ভয়ঙ্কর হতে থাকা মেন্ডিসকে সাজঘরে পাঠান ঘূর্ণিজাদু দেখিয়ে। ইনিংসে সবমিলে ৪ উইকেট শিকার। টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা বোলিংয়ে রাঙালেন আন্তর্জাতিক ম্যাচে ফেরার মঞ্চ।
রফিক মনে করেন যতদিন ফিট থাকবে ততদিনই খেলে যাওয়া উচিত রাজ্জাকের। বিপিএলের সময়ও নাকি রাজ্জাককে একই পরামর্শ দিয়েছিলাম তিনি। বলেছিলেন, ‘কারও কথা শুনে ক্রিকেট খেলবি না। যতদিন শরীরে কুলায় খেলে যাবি।’
‘টেস্ট ম্যাচে সিনিয়র প্লেয়ারদের দরকার। অভিজ্ঞতা হল এপর্যায়ে খেলতে খেলতে আসে। একজন সিনিয়র প্লেয়ার যে টেকনিকে খেলবে, একজন জুনিয়র সে টেকনিকে খেলবে না। টেস্ট ক্রিকেটটাই সিনিয়র খেলোয়াড়দের। পরিণত না হলে পারবে না। ওয়ানেডেতে, টি-টুয়েন্টিতে অনেক সময় ৪-৫জন নতুন প্লেয়ারও খেলে। টেস্টে কয়টা পরিবর্তন হয়? রাজ্জাক যেদিন পর্যন্ত ফিট থাকে, শরীরে কুলায়, খেলা উচিত।’ যোগ করেন রফিক।
২০১৪ সালে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চোট নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন রাজ্জাক। তারপর ঘরোয়া ক্রিকেটের চৌহদ্দিতে কেটেছে চারটা বছর। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ঝাঁকে ঝাঁকে উইকেট নিয়েও ব্রাত্য ছিলেন। ঘরোয়া আড্ডায় শাহারিয়ার নাফীস একদিন বলছিলেন রাজ (রাজ্জাক) ভাই সেরা ফর্মে ছিল বাদ পড়ার পরের বছরে। পরের দুই বছরও তার বোলিংয়ে ছিল বেশ ধার। ওই সময় ডাকলে ভাল সার্ভিস পেত বাংলাদেশ।
নাফীসের কথা শুনলে আফসোস বাড়বে রাজ্জাকের! চার বছরে তো কম আক্ষেপ, কম গ্লানি জমেনি মনে। আক্ষেপ নাফীসকে নিয়েও কম নয়। এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানও যে প্রতিভা অপচয়ের আরেক নাম। কখনও নিজের কারণে, কখনও নির্বাচকদের কারণে তারও ক্যারিয়ারে যতি পড়ে আছে! রাজ্জাকের দুয়ার খুলেছে, নাফীস হয়ত নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন নিজের জন্যও!